সঞ্জীব দ্রং-এর জন্ম গারাে পাহাড়ের কোলে সংরা গ্রামে। ১৯৬৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি, সন্ধ্যায়। মাঘ মাসে ওই সন্ধ্যায় গ্রামজুড়ে আকাশরাঙা পূর্ণিমা ছিল। উত্তরে একটু দূরে গারাে পাহাড় বাড়ির পাশে পশ্চিমে ছােট্ট মেননেং নদী। একদিকে পূর্নিমার চাঁদ উঠছে, অন্যদিকে একটি শিশুর জন্ম হচ্ছে। আর পূর্ণিমার রাতে যে-শিশু জন্মে, তার সম্পর্কে আম্বি (নানী) উষালতা দ্রং কী যেন অদ্ভুত কথা বলেছিলেন। মৃত্যুপথযাত্রী মা গ্রন্থকারকে সে কথা বলে গেছেন। বাবা সুহৃদ গাগ্রা, মা নয়নী দ্রং উভয়ে পরলােকগমন করেছেন। জীবনে গ্রন্থকারের পরিবার শরণার্থী হয়েছেন কমপক্ষে দু’বার। বালক সঞ্জীব নিজে একাত্তরে উদ্বাস্তু হয়েছেন মেঘালয়ে। এই নিয়ে তাঁর বই লেখার ইচ্ছে আছে ভবিষ্যতে।। সঞ্জীব দ্রং আদিবাসী জীবনে অনেক কঠিন সময়ের মধ্যেও বুকের ভেতর আশা জাগিয়ে রেখেছেন। তার স্বপ্ন একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে, সব মানুষ ভালাে হয়ে যাবে। সকলে আদিবাসীদের প্রতি, সকল মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও ভালােবাসা দেখাবে। পৃথিবী হয়ে উঠবে খুব সুন্দর। ইদানীং সঞ্জীব দ্রং বক্তৃতা দিয়ে বেড়ান। ছাত্রছাত্রী ও তরুণদের জন্য কথা বলে আনন্দ পান। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা করেছেন। আর নরওয়ের ট্রমসাে ইউনিভার্সিটি, আমেরিকার নটরডেমে সেন্ট মেরীস কলেজ, থাইল্যান্ডের বুরাফা বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াশিংটন জাস্টিস, পিস এন্ড ইন্টিগ্রিটি অব ক্রিয়েশন সেন্টারসহ অসংখ্য জায়গায় বক্তৃতা করেছেন। জাতিসংঘের অধিবেশনে জেনেভা ও নিউ ইয়র্কে কথা বলেছেন। রাষ্ট্রীয় আমন্ত্রণে আমেরিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কানাডা সরকার, অস্ট্রেলিয়া সরকার, ইউরােপিয়ান ইউনিয়নসহ অনেকের আতিথ্য গ্রহণ। করেছেন। ইদানিং টিভি টকশােতে তাকে দেখা যায়, এখানেও তিনি সমান জনপ্রিয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্সসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি নানা সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সক্রিয় সঞ্জীব দ্রং বলেন, মানুষে মানুষে, জীবনে জীবন মেলাবার এই আয়ােজন যেন থেমে না যায়। তিনি স্বপ্ন দেখেন, বুকের মধ্যে জমে থাকা কথাগুলাে সংগীতের মাধ্যমে প্রকাশ পাবে। পরম যত্ন ও মমতায় আদিবাসী কথাগুলাে গান ও সুর হয়ে যাবে একদিন।