“নারীর মূল্য” বইয়ের ভূমিকাঃ
‘নারী’ শব্দটির মধ্যে স্ত্রীজাতির যে মহিমা লুকায়িত, তা আমাদের অনেকেরই নয়, শতকরা নিরানব্বই জনেরই অজ্ঞাত । অথচ এই নারী’ মা। অতঃপর ভগিনী, প্রেয়সী, বধূ…। কিন্তু পুরুষজাতি নারীকে কী চোখে দেখে এসেছে যুগ যুগ ধরে! সে-ইতিহাস ভয়াবহতার ইতিহাস। সে-ইতিহাস পৃথিবীর কোনাে সভ্য সমাজের জন্য গৌরবের নয়। সমাজ, নীতি, ধর্ম… প্রভৃতি নারীকে যে কী মূল্য দিয়েছে এবং এখনাে দিয়ে আসছে তা অবশ্যই ভাবনার বিষয়।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়-এর ‘নারীর মূল্য শুধু লেখা নয়, এক বিস্তৃত ইতিহাস। তথ্যের সমৃদ্ধিতে যা হয়ে উঠেছে পৃথিবীর নারীর ইতিহাসের এক সংক্ষিপ্তসার। আজ যারা নারী-স্বাধীনতা নিয়ে হৈ-চৈ চেঁচামেচি করেন তারা কি জানেন পৃথিবীতে মানুষ হয়েও নারী কত বেশি অবমূল্যায়নের শিকার! কেবল ভারতবর্ষের সতীদাহ প্রথাকে নিন্দা করলেই হবে না, প্রাশ্চাত্যেও কি নারীর অবমূল্যায়ন নেহাৎ কম! এছাড়া সব ধর্মেই দেখা যায় নারীকে তার মর্যাদা হতে বঞ্চিত করা হচ্ছে সুচতুরভাবে।
‘নারীজাতি উন্নত না হলে মানুষজাতি কীভাবে উন্নত হয়! ভাবনার বিষয় বটে। পৃথিবীর অর্ধেক মানুষকে বঞ্চিত করে, অবহেলা করে, বঞ্চনা করে, কী করে মানুষ নিজেকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব বলে নিজেদের ঘােষণা করে। অন্যান্য প্রাণী মানুষের এই মূর্খতা বুঝবার ক্ষমতা পেলে উপহাসের সুযােগটা মােটেও ছাড়তাে না। আমরা নাকি আধুনিককালও পার করে এসেছি। কিন্তু ঘরের দিকে একটু দৃষ্টি দিলেই দেখবেন, আজো সেখানে পুরুষের অবস্থান যতটা সম্মানের সাথে—নারী কি মােটেও সে সম্মান পায়, নাকি তাকে কথা শুনে মুখ এঁটেই বসে থাকতে হয়। অন্যদিকে আবার আধুনিকতার নামে যে বেলেল্লাপনা হচ্ছে তা-ও কি আধুনিকতা!
এ বিষয়ে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নারীর মূল্য শুধু রচনাই নয়, একে পৃথিবীর পাঠ্য হিসেবে গ্রহণ করলেও অত্যুক্তি হবে না। নারীজাতির উন্নতির জন্য শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নারীর মূল্য রচনাটির গুরুত্ব অপরিসীম। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রচনাবলী থেকে বর্তমান রচনাটি গ্রন্থাকারে প্রকাশ করা হলাে। এই গ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে নারীজাতির উন্নতি হলে আমাদের শ্রম সার্থক হবে । বইটি মদ্রণের জন্য কথাপ্রকাশ-এর সতাধিকারী জনাব মােহাম্মদ জসিম উদ্দিন, এবং গবেষক তাহা ইয়াসিন, কবি চন্দন চৌধুরী, কবি অনুপ সাদি-সহ প্রকাশনার সাথে জড়িত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা রইল।
২৩ নভেম্বর ২০০৭। প্রভাষক, বাংলা বিভাগ। নটর ডেম কলেজ, ঢাকা।
মিজান রহমান সম্পাদক কর্ষণ লিটল ম্যাগাজিন।