ভূমিকা
একাত্তরের ধ্রুপদী আমার যুদ্ধসাহিত্য। এটি একটি উপন্যাস। আকার ক্ষুদ্র। সময়কাল একাত্তর থেকে পঁচাত্তর। এতে নেই সরাসরি যুদ্ধ, কিন্তু রয়েছে পরাজিত বীরাঙ্গনা এক নারীর মহাযুদ্ধ। নিরীক্ষাধর্মী এ-উপন্যাসটির গঠনশৈলী প্রচলিত বাংলা উপন্যাসরীতিকে অস্বীকার করেছে। দূরে সরিয়ে রেখেছে ইউরোপীয় উপন্যাসরীতি লাতিনীয় এবং আফ্রিদী-রীতিকেও। উপন্যাস হতে গেলে চলমান ধারণার ওই চরিত্র, কাহিনীর সূত্রকেও এখানে খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাক্য শেষে দাঁড়ির চেয়ে এই লেখায় প্রাধান্য অধিক জিজ্ঞাসা বা প্রশ্নবোধক চিহ্নের। এখানেই এর ব্যঞ্জনা-অর্থ। প্রায় ষোলো হাজার শব্দের ভেতর ‘রাত’ এবং ‘অন্ধকার’ প্রাধান্য বিস্তারকারী শব্দ। প্রতীকী উপমা, চিত্রকল্পগুলো প্রতিরূপকল্পের অংশ। তবে এটি গদ্যকবিতা নয়, বরং উপন্যাস। ধর্ষিতা নারীর প্রতি ‘বীরঙ্গনা’ উচ্চারণ কি তাদের অন্ধকার অজ্ঞাত কবরে তাড়িয়ে নেবার ধূর্ত কৌশল? এটি প্রশ্ন। নারীপ্রেমের গ্রহণযোগ্যতা কি অক্ষত সতীত্ব? পুরুষ পায় স্বাধীন দেশ, শহীদের রাষ্ট্রমর্যাদা, যুদ্ধে আক্রান্ত নারীর প্রা্প্তি কোনটি? বাঙালি নড়ে, উঠবে এসব প্রশ্নের সামনে। এতে তুমুল বিতর্ক ঘটতে পারে। একাত্তরের বন্দিশিবির থেকে ফেরা ধর্ষিতা নারী আবার চিরতরে হারিয়ে যায় পঁচত্তারে। স্বাধীনতা তাকে সহ্য করে না। আমার মনে হয়েছে এই প্রতিরূপকল্প-রীতি ছাড়া এই উপন্যাস লেখা অসম্ভব। এটাও প্রশ্ন হতে পারে ধ্রুপদী নামের যে নারী চরিত্র, আসলে সে কি কোনা রক্তমাংসের মানবী? নাকি রাষ্ট্রের প্রতিকল্প? তাই আকারে যে ক্ষুদ্র সে কিন্তু এক নিশ্বাসে পড়ার কাহিনী নয়। একই কারণে বইটিকে উৎসর্গও করা হলো একজন তরুণ কবিকে; কথাসাহিত্যিককে নয়; নয় কোনো প্রিয় মানুষকে।
—-হরিপদ দত্ত—-