ফ্ল্যাপে লিখা কথা
রাতের বেলা ট্রেনের শব্দ শুনলে আমি বিছানায় উঠে বসি ঠিকই কিন্তু স্টেশনে যাই না। ধলা সামছু যায়। হাতে হারিকেন ঝুলিয়ে ছুটে যায়। প্রতিটি কামরা লণ্ঠন উঁচিয়ে দেখে । তার স্ত্রী বাজার ছেড়ে চলে গেছে। ধলা সামছুর ধারনা, কোনো এক রাতের ট্রেনে সে আবরো এখানে ফিরে আসবে। তার স্ত্রী যেহেতু খারাপ মেয়ে মানুষ, সে দিনের ট্রেনে আসবে না। রাতের ট্রেনে আসবে। লম্বা ঘোমটা দিয়ে ট্রেন থেকে নামবে। লম্বা ঘোমটা টানা কাউকে নামতে দেখলেই ধলা সামছু তার কাছে ছুটে যায়। গলা নমিয়ে ফিসফিস করে বলে, আপনার নাম? আপনার পরিচয়।
ভূমিকা
জোছনার ফুল নামে একটা টিভি নাটক বানাব, তার জন্যে সেই ফেলেছি গাজীপুরে। জঙ্গলের ভেতর রেলস্টেশনের সেট। চমৎকার সেট তৈরি হল। মেকি রেললাইন, রেলাইনে শোলার পাথর। হার্ডবোর্ডের মালগাড়ির ওয়াগান। এক জোছনারাতে আমি সেট দেখতে গেলাম জঙ্গলের ভেতর কী সুন্দর নির্জন রেলস্টেশন! মোটেও মেকি মনে হচ্ছে না। আমি রেললাইন ধরে অনেকক্ষণ হাঁটলাম। তারপর স্টেশনের প্লাটফর্মে চুপচাপ বসে রইলাম। রেলস্টেশনে আমি একা। দ্বিতীয় কোনো মানুষ নেই। একসময় আমার গা কেন জানি ছমছম করতে লাগল। তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মাথার ভেতর নির্জন গ্রামের রেলস্টেশনের গল্প ঢুকে গেল। এই হল ‘ইস্টিশন’ লেখার ইতিহাস।
হুমায়ূন আহমেদ
নুহাশ পল্লী, গাজীপুর
২৮-০৮-৯৯