ফ্ল্যাপে লিখা কথা
হিমুর বাবা মানুষটা কিরকম?
বেঁটে, মোটা, কুৎসিত?
কি পোষাক পরতেন?
লুঙ্গি-গামছা, হাফপেন্ট, টি-শার্ট?
নাকি, হিমুর মতো হলুদ পাঞ্জারী?
তাঁর নাম কি?
বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র
হিমু’র বাবাকে নিয়ে এই বই
হিমুর বাবার কথামালা
* যারা হিমু নয় এই বইটি তাদের জন্য নিষিদ্ধ
ভূমিকা
বারো হাত কাঁকুড়ের তেরো হাত বিচি গ্রহণ করা যায়। বিচিটা না-কি আড়াআড়ি থাকে। পনেরো হাত বিচি গ্রহণ করার কোনোই কারণ নেই। হিমুর বাবার কথামালা চল্লিশ পৃষ্ঠার একটি বই। এখানে দুই পৃষ্ঠার ভূমিকার অর্থ বারো হাত কাঁকুড়ের পনেরো হাত বিচি।
এ ধরনের বইয়ের ধারণা আমার মাথায় আসে নি। কবি বাপ্পির মাথায় এসেছে। সে প্রায় জবরদস্তি করেই হিমুর বাবাকে নিয়ে আমাকে লিখিয়েছে। হিমুর বাবার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকে কাজটা করিয়েছে আমার তা মনে হয় না। তার মধ্যে ‘বাণিজ্য’ বিষয়টা কাজ করেছে বলে আমার ধারণা। কবি সাহেব কিন্তু আবার একজন প্রকাশকও। আমি নিশ্চিত বাপ্পি কল্পনায় দেখছে- বইমেলা শুরু হয়েছে। পাঠকরা লাইন বেঁধে কিনেছে “হিমুর বাবার কথামেলা”।
স্বপ্ন দেকতে সবাই ভালবাসে। কবিরা একটু বেশি ভালবাসেন। এটাই স্বাবাবিক। মানব সম্প্রদায়ে স্বপ্ন দেখে না হিমুরা। তারা অন্যদের স্বপ্ন দেখায়।
‘হিমুর বাবার কথামালা’ বইটি শুধুমাত্র হিমুরা পড়লেই ভাল হয়। অন্যরা (বিশেষ করে কিশোর কিশোরীরা) যেন না পড়ে। তাদের মাথায় ‘ভ্রান্তি’ ঢুকে যেতে পারে। ভ্রান্তি একবার ঢুকে গেলে তাকে বের করা বেশ কঠিন। ভ্রান্তি একবার ঢুকে গেলে তাকে বের করা বেশ কঠিন। আমি ভ্রান্তির চাষ করতে চাই না।
এখন কথা হচ্ছে হিমু কে? আমি নিজে কি পরিষ্কার জানি? মনে তো হয় না। প্রায়ই যে সব চিঠি পাই তার একটা বড় অংশ এই জাতীয় লেকা থাকে-
“স্যার, হিমু হইবার নিয়মাবলি দয়া করিয়া জানাইবেন। আমি সিল্কের পাঞ্জাবী খরিদ করিয়াছি। আমার এক বন্ধু বলিয়াছে হিমুদের পাঞ্জারী সুতি হইতে হইবে। এই বিষয়ে আপনার মূল্যবান মতামত জানাইয়া বাধিত করিবেন।”
“আংকেল, আমার নাম নাসিমা। আমি নবম শ্রেণীর ছাত্রী। আমার খুব ইচ্ছা আমি হিমু হব। মেয়েদের হিমু পোশাক কি? হলুদ পাঞ্জাবীর সঙ্গে কি ওড়না পরব? না-কি হলুদ শাড়ি পরব? হলুদ শাড়ি পরলে মনে হবে গায়ে হলুদে যাচ্ছি।”
“হুমায়ূন সাহেব! আমার বড় ছেলে সম্প্রতি হিমু হয়েছে। সে হলুদ পাঞ্জাবী পরে খালি পায়ে রাস্তায় হাঁটাহাটি শুরু করেছে। গতকাল পা কেটে বাসায় ফিরেছে। তাতে টিটেনাস ইনজেকশন দেয়া হয়েছে। আমার বক্তব্য আপনি লেখার মাধ্যমে কোমলমতিদের বিভ্রান্ত করে আনন্দ পান। একজন পিতা হিসেবে আপনার প্রতি অনুরোধ এই কাজটি করবেন না।”
আমার অবস্থা হচ্ছে ভিক্ষা চাই না হলুদ চিতাবাঘ সামলাও।
জগতের সমস্ত হিমুরা ভাল থাকুক।
এই শুভ কামনা।
হুমায়ূন আহমেদ
নুহাশ পল্লী, গাজীপুর।