“ফেরা”বইটির প্রথমের কিছু অংশ:
মতি মিয়া দ্রুত পায়ে হাঁটছিল।
আকাশ অন্ধকার হয়ে আছে। যে কোনাে সময় বৃষ্টি নামতে পারে। সঙ্গে ছাতা ফাতা কিছুই নেই। বৃষ্টি নামলে ভিজে ন্যাতা ন্যাতা হতে হবে। মতি মিয়া হন হন করে ডিসট্রিক্ট বাের্ডের সড়ক ছেড়ে সােহাগীর পথ ধরল। আর তখনি বড় বড় ফোটায় বৃষ্টি পড়তে শুরু করল। মতি মিয়ার বিরক্তির সীমা রইল না। সকাল সকাল বাড়ি ফেরা দরকার। শরিফার পা ফুলে ঢােল হয়েছে। কাল সারারাত কে কে করে কাউকে ঘুমাতে দেয়নি। সন্ধ্যার পর আমিন ডাক্তারের এসে দেখে যাবার কথা। এসে হয়তাে বসে আছে। মতি মিয়া গম্ভীর একটা ঝাকড়া জাম গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ভিজতে লাগল।
| দেখতে দেখতে বৃষ্টির বেগ বাড়ল। ঢালা বর্ষণ, জামগাছের ঘন পাতাতেও আর বৃষ্টি আটকাচ্ছে না, দমকা বাতাসের শোঁ শোঁ আওয়াজ। দিনের যা গতিক, ঝড় তুফান শুরু হওয়া বিচিত্র নয়। দাঁড়িয়ে ভেজার কোনাে অর্থ হয় না। মতি মিয়া উদ্বিগ্ন মুখে রাস্তায় নেমে পড়ল। পা চালিয়ে হাটা যায় না। বাতাস উল্টো দিকে উড়িয়ে নিতে চায়। নতুন পানি পেয়ে পথ হয়েছে দারুণ পিছল। ক্ষণে ক্ষণে পা হড়কাচ্ছে। সরকারবাড়ির কাছাকাছি আসতেই খুব কাছে কোথায় যেন প্রচণ্ড শব্দে বাজ পড়ল। আর আশ্চর্য বৃষ্টি থেমে গেল সঙ্গে সঙ্গে। মতি মিয়া অবাক হয়ে শুনল সরকারবাড়িতে গান হচ্ছে। কানা নিবারণের গলা বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দের মধ্যেও পরিষ্কার শােনা যাচ্ছে,
“আগে চলে দাসী বান্দি পিছে ছকিনা, তাহার মুখটি না দেখিলে প্রাণে বাঁচতাম না
ও মনা ও মনা …” সরকারবাড়ির বাংলা ঘরের দরজা জানালা বন্ধ। মতি মিয়া ধাক্কা দিতেই নাজিম সরকার মহাবিরক্ত হয়ে দরজা খুললেন। হ্যা, কানা নিবারণই গাইছে। সেই গাট্টা গােট্টা চেহারা, পান খাওয়া হলুদ রঙের বড় বড় কুৎসিত দাঁত। কানা নিবারণ গান থামিয়ে হাসি মুখে বলল, মতি ভাই না? পেনাম হই। অনেকদিন পরে দেখলাম।
| মতি মিয়া বড়ই অবাক হলাে। কানা নিবারণের মতাে লােক তার নাম মনে রেখেছে। জগতে কত অদ্ভুত ঘটনাই না ঘটে। কানা নিবারণ গম্ভীর হয়ে বলল, মতি ভাইরে একটা গামছা টামছা দেন। কেউ গা করল না। নাজিম সরকার রাগী গলায় বললেন, ভিজা কাপড়ে ভিতরে আসলা যে মতি? দেখ ঘরের অবস্থা কি করছ? তােমার বুদ্ধিশুদ্ধি আর হইল না, ছিঃ ছিঃ।