“জয়জয়ন্তী”বইটির প্রথমের কিছু অংশ:
আমি ঘুরে-ফিরে একটা স্বপ্নই দেখি – মামুন এবং আমি পাশাপাশি একটা রিকশা করে যাচ্ছি। রিকশার চাকার সঙ্গে কি করে যেন শাড়ি পেঁচিয়ে গেল। আমি চেঁচিয়ে বলছি – রিকশা থামাতে বল, রিকশা থামাতে বল। মামুন চিৎকার করছে – এই রিকশা, থাম থাম। কিন্তু রিকশাওয়ালা কিছুই শুনছে না – সে সমানে প্যাডেল করে যাচ্ছে। আশেপাশে লােক জমে যাচ্ছে। একজন ট্রাফিক পুলিশ পর্যন্ত রিকশা থামাবার জন্য ছুটে আসছে … স্বপ্নের এই জায়গায় আমি জেগে উঠি। আমার বুক ধ্বক ধ্বক করতে থাকে। পানির পিপাসা হয়। নিজেকে ধাতস্থ করতে অনেক সময় লাগে। বিছানায় চুপচাপ বসে হাঁপাতে থাকি। এই সময় বাবা এসে আমার দরজায় ধাক্কা দিতে দিতে বলেন, কি হয়েছে রে মা? কি হয়েছে?
বাবার ঘর দোতলার শেষ মাথায়। রাতে তার ঘুম হয় না বললেই হয়। তিনি সামান্য শব্দেই চটি পায়ে বের হয়ে আসেন। আমি দুঃস্বপ্ন দেখতে দেখতে যে শব্দ করি তা নিশ্চয়ই সামান্য না।
আমার পাশের ঘরে বাবলু ঘুমায়। তার ঘুম অবশ্যি কখনাে ভাঙে না। আমার মত সেও দুঃস্বপ্ন দেখে। তার দুঃস্বপ্নগুলি বিকট এবং বারবার। সে বিশ্রী ধরনের গােঙানির শব্দ করতে থাকে, হাত-পা ছুঁড়তে থাকে। আমি নিজেই ভয়ে অস্থির হয়ে পড়ি। বাবা ছুটে এসে দরজায় ধাক্কা দিতে দিতে বলেন – কি হয়েছে? এই বাবলু, এই! দরজা খােল, দরজা খােল। বাবর দুঃস্বপ্নগুলি সহজে ভাঙে না। সে গো গো শব্দ করতে থাকে এবং বিছানায় নড়াচড়া করতে থাকে। এক একবার মনে হয়, বিছানা থেকে গড়িয়ে বােধহয় মেঝেতে পড়ে যাবে। বাবা ভয় পেয়ে আমাকে ডাকেন রাত্রি! রাত্রি মা! আমি বাবার পাশে দাঁড়াই। দুজনে মিলে দরজা ধাক্কাতে থাকি। এক সময় বাবলুর ঘুম ভাঙে কিন্তু চেতনা পুরােপুরি ফিরে আসে না – কারণ সে কঁপা গলায় ডাকতে থাকে – মা ! মা ! বাতি জ্বালাও মা। তার মনে থাকে না যে মা মারা গেছেন আট বছর আগে। ছেলের দুঃস্বপ্নের সময় তিনি এসে বাতি জ্বালাতে পারবেন না।
বাবা ব্যস্ত হয়ে ডাকেন – ও বাবলু! বাবলু !