ফ্ল্যাপে লিখা কথা
* সমকাল ও নিকট অতীতে ব্যবহৃত বাংলাদেশের শব্দভান্ডারের সরল ইংরেজি অর্থ
* ৫০,০০০ ভুক্তি ও উপভুক্তি
* শব্দার্থের সঙ্গে সঙ্গে শব্দের উৎস-নির্দেশ, পদবিন্যাস, শব্দ ব্যবহারের পরিপ্রেক্ষিত, প্রয়োগবাক্য।
* শব্দ থেকে জাত বাগধারা, বাগবিধি, প্রবাদ-প্রবচন, ও শব্দের সমাজবদ্ধ রূপকে উপভুক্তিরূপে গ্রহণ।
* গুরুত্ব অনুসারে শব্দার্থের সংখ্যানির্দেশ
* বহুল পরিমাণে পৌরাণিক, লোকজ ও ঐতিহাসিক প্রসঙ্গের উল্লেখ
* সাম্প্রতিক বাংলা ভাষার গৃহীত বহু দেশী-বিদেশী শব্দের সংযোজন।
* বাংলাদেশের জনজীবনে নিত্যব্যবহার্য বহু আরবি-ফারসি শব্দের প্রথমবারের মতো অন্তর্ভুক্তকরণ
* শীর্ষশব্দ এবং যেখানে একাধিক বানানে লেখা ভুক্তি আছে সেখানে প্রথমটি যথাসম্ভব বাংলা একাডেমীর প্রমিত বানান অনুসারী
ভূমিকা
বাংলা-ইংরেজি অভিধান সংকলনের ইতিহাস দীর্ঘ দিনের- প্রায় দুই শত বছরের। এ দেশে ইংরেজদের আগমন, ধর্ম প্রচার ও শাসন প্রতিষ্ঠান সঙ্গে এর নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর থেকে এ দেশে যেসব বাংলা-ইংরেজি অভিধান রচিত হয়েছে, তার বেশির ভাইকেই শব্দ-নির্ঘন্ট বলা চলে। এসব অভিধানে কোনো অভিন্ন নীতি অনুসৃত হয়নি এভং অন্তর্ভুক্ত শব্দের সংখ্যায়ও রয়েছে বিপুল তারতম্য। বাংলা ভাষার নিত্য ব্যবহৃত প্রচুর আরবি-ফারসি শব্দের অনুপস্থিতি এসব অভিধানে লক্ষ্য করা যায়।
কেবল বিশুদ্ধ জ্ঞানচর্চায় নিয়োজিত বিদ্বৎ-সমাজের ব্যবহার ও সহায়তার জন্য নয়, বাংলাভাষী সকল শিক্ষিত ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনের পেশাগত অথবা ব্যবসায়িক প্রয়োজনে, বাংলা গদ্যের ইংরেজি রূপান্তরে অথবা বাংলাভাষী শিক্ষিতজনের ইংরেজি রচনার কাজকে সহজতর করার উদ্দেশ্যে বাংলা একাডেমীর বর্তমান অভিধানটি প্রণীত। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় নিয়োজিত বিদ্যার্থীরা এর থেকে উপকৃত হবেন বলে আমরা আশা করি।
সমাজের প্রয়োজনে ভাসার বিকাশ ও বিবর্তন ঘটে। একটি ভাষাগোষ্ঠীর মনীষা ও চারিত্রের প্রতিফলন ঘটে বাষার দেহে। প্রত্যেক বাসার নিজস্ব একটি মেজাজ রয়েছে। যা অনুবাদে বা ভাষান্তরে হারিয়ে যাবার আশঙ্কা থাকে। বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করার প্রক্রিয়ায় বাংলা বাষার শুধু শাব্দিক অর্থ নয়, ব্যঞ্জনটুকুও যাতে ইংরেজি ভাষায় যথাসম্ভব সঞ্চারিত হয়, তার দিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। বর্তমানে অভিধান প্রণয়নকালে এই দিকটির প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখা হয়েছে।
বর্তমান অভিদান সংকলনকালে বাংলাদেমের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ভাষা-ব্যবহারের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখা হয়েছে। এ অভিধানে শব্দার্থের সঙ্গে শব্দের উৎস-নির্দেশ পদবিন্যাস, শব্দ ব্যবহারের পরিপ্রেক্ষিত, প্রয়োগবাক্য ইত্যাদি সন্নিবেশিত আছে। শব্দ থেকে জাত বাগবিধি, প্রবাদ-প্রবচন শব্দের সমাসবদ্ধ রূপ প্রভৃতি উপভুক্তিরূপে গৃহীত হয়েছে। যেক্ষেত্রে একই শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে, সেক্ষেত্রে সংখ্যানির্দেম করে অর্থগুলোকে বিন্যস্ত করা হয়েছে। ভুক্তির মধ্যে ব্যবহৃত ঢেউ হিহ্ন মূল ভুক্তির পরিবর্তে ব্যবহৃত। বানানের ভিন্নতা সত্ত্বেও অর্থ এক হলে তা নির্দেম করা হয়েছে সমান চিহ্ন দিয়ে। একইভাবে দ্রষ্টব্য অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে থীর চিহ্ন। চতুর্ভুজ চিহ্ন ব্যবহৃত হয়েছে পদান্তর নির্দেশের ক্ষেত্রে। বাংলা শব্দের বানানে যথাসম্ভব বাংলা একাডেমীর বানাননীতি অনুসৃত। এ অভিধানের আর একটি বৈশিষ্ট্য হলো, এতে হর-হামেশা-ব্যবহৃত আঞ্চলিক ও নিত্যব্যবহার্য প্রচুর আরবি-ফারসি শব্দ ভুক্তিরূপে গৃহীত হয়েছে।
এ অভিধান রচনায় একদিকে যেমন অভিধানবিজ্ঞানের সাম্প্রতিকতম ধারণাসমূহের ব্যবহার হয়েছে তেমনি শীর্ষশব্দ অন্তর্ভুক্তির সময়ে শব্দের সমকালীন প্রচলন বা ব্যবহারের উপর জোর দেয়া হয়েছে। শব্দচয়নের আর একটি দিক সম্পর্কেও কিছু বলা দরকার। সাংস্কৃতির ও সামাজিক রুচিবোধের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভাষাও পরিবর্তিত হয় এবং বহু নতুন শব্দ ব্যবহারিক মর্যাদা পায়। শব্দ চয়নে এ দিকেও লক্ষ্য রাখা হয়েছে।
বাংলা একাডেমীর বাংলা-ইংরেজি অভিধান প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয় ১৯৯১ সালের মাঝামাঝি সময়ে। যে কোনো অভিদান সংকলনের কাজ খুব দুরূহ এবং সময় সাপেক্ষ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ ধরনের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পথেও অনেক বাধা। তা সত্ত্বেও সংকলকদ্বয়ের সহযোগিতায় আমরা যথাসম্ভব অল্প সময়ের মধ্যে পান্ডুলিপি প্রণয়নের কাজ সমাপ্ত করেছি।
অভিধানটি প্রকাশের ব্যাপারে যাঁর কৃতিত্ব সর্বাধিক তিনি হলেন একাডেমীর সুযোগ্য মহাপরিচালক প্রফেসর মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ। তাঁর ক্লান্তিহীন কর্মপ্রেরণা, সম্পাদক ও সংকলকদের যুগপৎ অনুপ্রাণিত ও তাড়িত করার অশেষ ক্ষমতা এ অভিধান রচনাকে সম্ভব করেছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জনাব সেলিনা হোসেনের সক্রিয় ভূমিকা ও আন্তরিক প্রচেষ্টা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। জনাব ওবায়দুল ইসলাম এ অভিধান সংকলনের শেষ পর্বে এ উপবিভাগের দায়িত্বে এসে বিশেষ নিষ্ঠা সঙ্গে এর প্রকাশনার সার্বিক দায়িত্ব পালন করেছেন। সংকলন ও প্রকাশনা তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালনে জনাব লতিফুর রহমান ও ডক্টর স্বরোচিয় সরকার উভয়েই শুধু যে কঠোর শ্রম স্বীকার করেছেন তা নয়- তাঁদের দুজনের কাজে তাঁরা বিরল নিষ্ঠা ও জ্ঞানস্পৃহার পরিচয় দিয়েছেন। প্রুফ-পঠনে বিশেষ সহায়তা করেছেন জনাব মিজানুর রহমান। জনাব সাইদুর রহমান, জনাব মিন্টু কুমার সূত্রধর, জনাব মোহাম্মদ এমদাদুল হক ও জনাব মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম-এর অক্লান্ত পরিশ্রম অভিধানটির কম্পোজের কাজ ত্বরান্বিত করেছে এবং তাঁদের কাছ থেকে আমরা অকুণ্ঠ সহযোগিতা পেয়েছি। এঁদের সকলের কাছে আমরা ঝণী।
অভিধানটি বাংলাদেশের সুধীসমাজে আদৃত হলে এবং ব্যবহারিক প্রয়োজনে কাজে লাগলে আমাদের শ্রম সার্থক হবে।
মোহাম্মদ আলী
মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান
জাহাঙ্গীর তারেক
৩০ জুন ১৯৯৪
১৬ আষাঢ় ১৪০১