“শ্রেষ্ঠ কবিতা” বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ
ফরহাদ মজহার এখন কিংবদন্তি। জীবনযাপন, কাজ, কাব্য, সঙ্গীত, নাটক, চিন্তাভাবনা সব মিলিয়েই। কাজ করছেন নীরবে। কৃষি, শিল্প, প্রকৃতি, ভাবান্দোলন, রাজনীতি ইত্যাদি। তিনি আছেন যেখানে তার দরকার-তার দায় ও ভূমিকাসমেত। ষাট দশকের শেষ থেকে ‘খােকন এবং তার প্রতিপুরুষ’-এর কবিতাগুলাে ছাপা শুরু হবার পর থেকে বাংলা কবিতা আর আগের মতাে রইলাে না। কাব্যনির্মাণের শৈলী-বিশেষত বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক অনুষঙ্গ ছিল নিছকই কবিতার বাইরের দিক, আসলে কবি ও কবিতার বেড়ে ওঠা কিংবা কবিতার নিজের ভেতরের লড়াই-খােকনের সঙ্গে তার প্রতিপুরুষের-একই সঙ্গে একটি জনগােষ্ঠির বেড়ে ওঠারও সংগ্রাম, একটি রাষ্ট্রেরই ইতিহাসসেটা ফরহাদ দেখিয়েছেন কবিতা, ভাব এবং ইতিহাসের ত্রিভুজ এঁকে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে তিনি নিরীক্ষণ করলেন অনেক গভীর থেকে। তার শ্রেণীর টানাপােড়েন দিয়ে বােঝার চেষ্টা করলেন। কবিতার এই জ্যামিতি আজ অবধি কেউই আর নতুন করে আঁকতে পারেননি।
তারপর এলাে লিপ্ত ধারার কবিতা। যেখানে কবিতা সরাসরি রাজনীতি ও ইতিহাস নির্মাণে অংশগ্রহণ করে। যেমন, “আমাকে তুমি দাঁড় করিয়ে দিয়েছ বিপ্লবের সামনে। এলাে কবিতার সঙ্গে দর্শনের টক্কর দেওয়া। যথা-বৃক্ষ’ অর্থাৎ মানুষ ও প্রকৃতির ভেদ বিচারের পদ্য।
এরপর ঘটল বাংলা কবিতার বড় ঘটনা : ‘এবাদতনামা’। ধর্মতত্ত্বকে তার দৈবী বা আসমানী খােলস খুলে ফেলতে ভেতর থেকে বাধ্য করা। ধর্ম ছাড়া মানুষের ইতিহাস অসম্ভব। মানুষই মানুষের বিদ্যা, নীতি ও বিধানের শর্ত। জ্ঞানরূপে তাকে জানা, ভক্তি রূপে তার উপাসনা বা সালাত আদায় করা এবং করণকর্মে সেই রূপ চর্চা ছাড়া মানুষের ইতিহাস নাই-ফরহাদ বললেন। এবাদতনামা বাংলার কাব্য ও ভাবান্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠলাে। তার শেষ নিরীক্ষার মধ্যে আছে কবিতার বােনের সঙ্গে আবার’। জননী সরস্বতীর গর্ভে বসে নিজের সহােদরার সঙ্গে কিংবা সীমান্তের দুই পাশের ভাই আর বােনের অভিনব। কথােপকথন এই কাব্য। সর্বশেষ ক্যামেরাগিরিতে বাংলাভাষাকে দিয়েছেন দিব্যতার স্বাদ; বাংলা কবিতা পেয়েছে অনির্বচনীয়তা প্রকাশে এক বাঙ্গময় দ্যুতি। এখন হাতে নিয়েছেন ‘শিবানী’– বাংলার কৃষিজীবনের ভিতরে পুষ্ট প্রতীক, আদিকল্প ও প্রাণরক্ষার অন্তর্গত অনুপ্রেরণার ইতিহাস-পুরাণের কাব্যিক পুনর্নিমাণে ।
………. এইসব সতেজ, উজ্জল উদ্ভাসের নক্ষত্রমণ্ডলীর মতাে মুঠোভর্তি একটি আয়ােজন ফরহাদ মজহারের শ্রেষ্ঠ কবিতা।