মিনার মনসুর সত্তরের দশকের সর্বাপেক্ষা দায়বদ্ধ কবি। এই দায়বদ্ধতা যুগপৎ শিল্প ও মানুষের কাছে। তবে নিছক শিল্পের জন্যে শিল্প-এই মতবাদে তিনি বিশ্বাসী নন। তাঁর কবিতা ও কর্ম, শিল্প ও জীবন এবং বিশ্বাস ও স্বপ্নের কেন্দ্রে রয়েছে মানুষ। এই মানুষ একদিকে যেমন প্রবলভাবে স্বদেশ ও সমকাললগ্ন; তেমনি, অপরদিকে, সর্বকালে ও সর্বমানবে বিস্তৃত তার শেকড়। এই মানুষ অপরাজেয় ও অবিনশ্বর। মিনার মনসুরের কবিতার একটি বড়ো অংশ জুড়ে আছে শাশ্বত এই মানবের বন্দনা। দীর্ঘ দুই যুগের কাব্যসাধনায় তিনি কখনই চ্যুত হন নি তাঁর এই সহজাত দায়বদ্ধতা থেকে। এই পথ বরাবরই বন্ধুর ও কন্টকাকীর্ণ।
বারংবার তিনি রক্তাক্ত হয়েছেন; পীড়িত হয়েছে অস্তিত্বের সর্বগ্রাসী সংশয়ে; অন্তর্গত ও পারিপার্শ্বিক নানা ঘটনা-দুর্ঘটনার অভিঘাতে কখনোবা টলে উঠেছে তাঁর বিশ্বাসের ভিত্তিমূল। তারপরও তিনি আবর্তিত হন ব্যক্তিমানুষের জটিল মনোবিশ্ব আর মানবসমগ্রের যতো উত্থান-পতনকে কেন্দ্র করে। এই সবকিছুরই অজটিল, অন্তরঙ্গ শব্দরূপ মিনার মনসুরের কবিতা। তাঁর কবিতার আপাত সারল্যকে ছাপিয়ে ওঠে ব্যাখ্যাতীত অপ্রতিরোধ্য এক তৃষ্ণা; অনির্বাণ এক অনুসন্ধিৎসা। এই অনুসন্ধিৎসা, এই তৃষ্ণাই তাড়িত করে তাঁকে কবিতার দুর্গম ও অজ্ঞাত পথযাত্রায়। এ-যাত্রায় তিনি সুদূরের অভিলাষী; – সেই সুদূরের, যেখানে মিলে যায় শিল্প ও জীবনের অনিঃশেষ স্রোতোধারা।