“ইকারাস”বইটির প্রথমের কিছু অংশ:
সমুদ্রের পানিতে সূর্যটা পুরােপুরি ডুবে না যাওয়া পর্যন্ত জহুর বালুবেলায় চুপচাপ বসে রইল। সে প্রতিদিন এই সময়টায় সমুদ্রের তীরে আসে এবং চুপচাপ বসে সূর্যটাকে ডুবে যেতে দেখে : ঠিক কী কারণে দেখে তার কোনাে সঠিক ব্যাখ্যা নেই। সে খুবই সাধারণ মানুষ। প্রকৃতি বা প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্য এসব ব্যাপারে তার কোনাে আগ্রহ নেই। যারা তাকে চেনে তাদের ধারণা সে বাউণ্ডুলে এবং ভবঘুরে ধরনের মানুষ। সেটি পুরােপুরি সত্য নয়—অল্প সময়ের ব্যবধানে তার একমাত্র মেয়ে এবং স্ত্রী মারা যাবার পর হঠাৎ করে সে পৃথিবীর আর কোনাে কিছুর জন্যেই আকর্ষণ অনুভব করে না।
সূর্যটা পুরােপুরি ডুবে যাবার পর জহুর উঠে দাঁড়াল এবং নরম বালুতে পা ফেলে হেঁটে হেঁটে ঝাউগাছের নিচে ছােট টংঘরটাতে হাজির হলাে। সেখানে কাঠের নড়বড়ে বেঞ্চটাতে বসে জহুর এক কাপ চায়ের অর্ডার দেয়। তার যে চা খেতে খুব ইচ্ছে করে তা নয়, তারপরেও সে রুটিনমাফিক এখানে বসে এক কাপ চা খায়। যে ছেলেটা দুমড়ানোে কেতলি থেকে কাপে গরম পানি ঢালে, দুধ চিনি দিয়ে প্রচণ্ড বেগে একটা চামচ দিয়ে সেটাকে খুঁটে তার সামনে নিয়ে আসে জহুর বসে বসে তার কাজকর্ম লক্ষ করে। কেন লক্ষ করে জহুর নিজেও সেটা জানে না। এখন তার জীবনের আর কোনাে উদ্দেশ্য নেই, একদিন থেকে পরের দিনের মাঝে কোনাে সম্পর্ক নেই।
জহুর অন্যমনস্কভাবে চায়ের কাপে চুমুক দেয়, চা-টা ভালাে হয়েছে না মন্দ হয়েছে জহুর সেটাও বুঝতে পারল না। অনেকটা যন্ত্রের মতাে কাপটা টেবিলে নামিয়ে রেখে সে সামনের দিকে তাকালাে এবং দেখল মধ্যবয়স্ক একজন মানুষ তার দিকে তাকিয়ে আছে। জহুরের ভাসা ভাসাভাবে মনে হলাে এই মানুষটা সে আগে কখনাে দেখেছে কিন্তু ঠিক কোথায় দেখেছে