ভূমিকা
কবিতার অনিশ্চিত পথপাথর কেটে গেল তিরিশ বছরেরও বেশি সময়। এখন মনে হয় কোথায় যেন একটা পরিবর্তনের ঘন্টাধ্বনি শুনতে পাচ্ছি আমার জীবনে এবং সেই সাথে সাহিত্যে। ১৯৬৯ সালে আমার প্রথম তারুণ্যের সূচনায় কবিতা আমায় দু হাত বাড়িয়ে ডাক দিয়েছিল, তখন মফস্বল কুষ্টিয়ার আকাশ ছিল মেঘলা, সারা দেশে আসন্ন বিপ্লবের পূর্বাভাস। জাতির ক্রান্তিলগ্ন এবং আমারও জীবনের এক ব্যতিক্রমী অভিযাত্রার সূচনামুহূর্ত ছিল সেই সময়। আমি বৈষয়িক প্রতিষ্ঠার সব সম্ভবনাকে দূরে সরিয়ে শুধু কবিতাকে-শুধু সাহিত্যসাধানাকেই গ্রহণ করেছিলাম জীবনের একমাত্র ধ্রুব হিসেবে। সেই সময়ের কুষ্টিয়া কোর্টস্টেশন, গড়াই নদী, থানাপাড়া, মিলপাড়া, হাইরোডের পাশে পাবলিক লাইব্রেরি, ছেঁউড়িয়ায় লালনের মাজার প্রভৃতি আমার দিবারাত্রির সঙ্গী। বোদলেয়ার ও জীবনানন্দ ডাক দিয়েছিলেন দুই অবুঝ কিশোরের মতো জানালায়। এরপর ঢাকায় এস অবিশ্রান্ত পথ হেঁটে আর কবিতার বৃষ্টিতে বর্ষযাপন করে এখন দেখতে পাচ্ছি কেটে গেছে অনেক সময়। এতদিন পরে আমারও জীবনে যেন একটি পরিবর্তন আসন্ন, এই মোড় ফেরারা মুহূর্তে আমার পেছনে ফেলে আসা জীবনের একটা পরিমাপ দরকার, সেই সাথে দরকার আমার এ পর্যায়ের কবিতাচর্চার হিসেব-নিকেশ। প্রকাশিত ছয়টি কাব্যগ্রন্থ থেকে কবিতা বাছাই করে নিবেদন করছি আমার শ্রেষ্ঠ কবিতা। এছাড়া আমার বেশ কিছু অগ্রন্থিত প্রিয় কবিতা জুড়ে দিচ্ছি এর সাথে। ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ প্রকাশের শুভদিনে আমার সব শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধু ও অনুরাগী পাঠকদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন।
ইকবাল আজিজ