রবীন্দ্রনাথ বাঙালি জীবনে এক বিস্ময়। এত তাঁর রচনা, এত কাজে তাঁর ব্যস্ততা, জমিদারি থেকে বিশ্বমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার মতো গুরুদায়িত্ব কাঁধে, তার পরও জীবনের প্রায় চারটি দশক টানা এক মাস এক জায়গায় থেকেছেন ক্বচিৎ। নতুন জায়গার টানে আর ভালোবাসার ডাকে কেবল ছুটেছেন। যে কালে বাঙালি কিনা ঘর থেকে দু-পা ফেলে কোথাও যায় না, ঘরকুনো, ভেতো, ভীতু কুঁড়ে বলে দুর্নাম কুড়িয়েছে তখন রবীন্দ্রনাথ বাংলা ও ভারত ঢুঁড়ে, পূর্ব-পশ্চিমের চেনাজগৎ চষে অসুস্থ শরীরে ছুটেছিলেন দক্ষিণ আমেরিকার দুর্গম পাহাড়ি দেশ পেরুর পথে। ভাঙা শরীরকে চাঙা করতে আর্জেন্টিনায় যাত্রাবিরতি করেছিলেন। ভ্রমণ তাঁকে কাহিল করেনি, ভ্রমণের অনিশ্চয়তা বা ব্যস্ততা পারেনি সৃজনশীলতায় কি দায়িত্ব পালনে বাদ সাধতে। বরং সব দাবি মিটিয়ে ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও লিখে গেছেন-বাংলা সাহিত্যের উপেক্ষিত এ ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে। সরস মনে সকৌতুকে জানিয়েছেন কী দেখলেন, কী বুঝলেন, কাদের সঙ্গে মিশলেন-সেসব কথা। বাংলা ভ্রমণসাহিত্যেও রবীন্দ্রনাথই হয়ে থাকলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। সবার চেয়ে এগিয়ে। প্রথম খণ্ডে আছে ১. য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র, ২. য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি, ৩. পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি ও ৪. রাশিয়ার চিঠি।