“দেশভাগের গল্প” বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা:
১৯৪৭ সালের দেশভাগ এক বিরাট ও সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক ঘটনা। সে-ঘটনার ফলে বিশাল বিপুল বিচিত্র মহাভারতবর্ষের ভূগােলটাই যে শুধু বদলে গিয়েছে তা নয়; বদলে গিয়েছে মানুষ ও তাদের মধ্যেকার সম্পর্কগুলিও। মানুষে মানুষে সম্পর্কের সেইসব পরিবর্তনই বুঝি-বা নিয়ন্ত্রণ করেছে বিভক্ত ভারতবর্ষের খণ্ডিত অংশগুলির রাজনীত, অর্থনীতি, কূটনৈতিক সম্পর্কসুদ্ধ অনেক কিছু। ইতিহাসবেত্তা, সমাজবিশারদ, অর্থনীতিবিদ, পরিবেশ-বিশেষজ্ঞরা সে-সব বিষয়ে অনেক লিখেছেন, এখনাে লিখে চলেছেন, ভবিষ্যতেও লিখবেন। কিন্তু ব্যক্তি ও সমাজের ওপর দেশভাগের প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ। অভিঘাতের আখ্যান বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে রচিত হয়েছে সামান্যই। হাসান আজিজুল হক সেই বিরল কথাশিল্পীদের একজন, যার লেখা গল্প-উপন্যাসের বড় ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়ে রয়েছে দেশভাগ। তাঁর রচিত আগুনপাখিই সম্ভবত বাংলাদেশের উপন্যাসভাণ্ডারের একমাত্র শিল্পরত্ন, যার উপজীব্য দেশভাগ। আগুনপাখি লেখার আগে তিনি দেশভাগ নিয়ে লিখেছেন এমন কতগুলি ছােটগল্প, যেগুলাের বাংলা কথাসাহিত্যের অমূল্য সম্পদ হিসেবে স্থায়ীভাবে স্থান করে নিয়েছে। এ-বইতে সেই সব গল্প একত্রে পাওয়া নিঃসন্দেহে আনন্দের বিষয়। গভীরভাবে ইতিহাসনিষ্ঠ, সুতী রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণশক্তির অধিকারী, ব্যক্তি ও সমাজের মনােবিশ্লেষণে সূক্ষ্ম দৃষ্টিসম্পন্ন লেখক হাসান আজিজুল হক সর্বোপরি একজন সুনিপুণ কথাশিল্পী। মানুষের সুখ-দুঃখ, আশা-নিরাশা, সৌন্দর্য-কদর্যতা, সারল্য-কূটিলতা এবং রাষ্ট্র-রাজনীতি-সমাজ ও প্রকৃতির ক্ষমাহীন বিরুদ্ধতার মুখে মানুষের নিরন্তর সংগ্রামের ছবি আঁকায় তাঁর প্রতিভা ও দক্ষতার তুলনা কেবল তিনিই। এ-বইয়ের প্রত্যেক গল্পে সেই স্বাক্ষর রয়ে গেছে।