ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা
এই বইটিকে এককথায় বালা যায় চিন্তাকোষ।১৯৪৭-এ ভারত-বিভাগ তথা পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে ১৯৭১-এ স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরুর আগে পর্যন্ত আজকের বাংলাদেশ নামে পরিচিত ভূখণ্ডটির চিন্তাচর্চার পরিচয় তার অন্তর্গত স্ববিরোধ ও সম্ভাবনা, অর্থাৎ ইতিবাচক ও নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যসহ মোটামুটি বিস্তৃতভাবে তুলে ধরা হয়েছে এই গ্রন্থে।আর তা করতে গিয়ে গ্রন্থকার কোথাও মতান্ধতা বা একদেশদর্শিতার পরিচয় দেননি। তা সে লেখক-নির্বাচন কিংবা তাঁদের বক্তব্য উপস্থাপন যে-ব্যাপারেই হোক না কেন। আর ইতিহাস ও সমকালীন রাজনৈতিক-সামাজিক পটভূমিতে রেখেই কাজটি করা হয়েছে। আমাদের আজকের অনেক সমস্যা-সঙ্কটের কারণ, সম্মূখগতির পথের বাধা যে জাতির দ্বিখণ্ডিত-মানস, তার শেকড় কি নিকট ও দূর ইতিহাসেই প্রোথিত নয়? তারপরও কোথাও কি কোনো ঐক্যসূত্র ছিল না? বাংলাদেশের স্বাধীনতার কোনো পূর্বাভাস কি আমাদের লেখক-চিন্তাবিদদের রচনায় পাওয়া যায়? এর রকম একটি মহাআবহর জন্য তাঁর কি আদৌ প্রস্তুত ছিলেন? কিংবা যে-কথাটা প্রায়শ বলা হয়, পূর্ব বাঙলার মানুষের ভাষা ও সাংস্কৃতিক স্বাধিকার রক্ষার সংগ্রামই ক্রম-উত্তরণের পথ বেয়ে মুক্তিযুদ্ধে পরিণতি লাভ করেছে, তা-ও কী অর্থে ও কতটা সত্যি? এসব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে বইটি পাঠকদের সাহায্য করবে।‘ইতিহাস থেকে কিংবদন্তিকে আলাদা করে বিচারে’র কথা বলেছেন গ্রন্থকার।এ-গ্রন্থটিকে সে-কর্তব্যের সূত্রপাত বললেও অত্যুক্তি হবে না।বাংলাদেশের রাজনৈতিক-সামাজিক ইতিহাস সম্পর্কে আগ্রহী পাঠক কিংবা অনুসন্ধিৎসু গবেষকের জন্য বইটি একটি অবশ্যপাঠ্য আকরগ্রন্থ (যাহা ২০০৭ সালে বইমেলায় সেরা বইয়ের জন্য বাংলা একাডেমী পুরস্কারপ্রাপ্ত) হিসেবে বিবেচিত হবে বলে আমাদের ধারণা। গবেষণার প্রচলিত রীতি এড়িয়ে সাধারণ পাঠকের উপযোগী সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় বইটি লেখা হয়েছে।এমন কি বইয়ের পাদটীকা অংশগুলোও হবে পাঠকের জন্য কৌতূহলোদ্দীপক বাড়তি পাওনা।