মেয়েটির খুব শখ—পাহাড়চূড়ায় বসে জ্যোৎস্না দেখবে সে। তবে একা নয়, একজন থাকবে তার পাশে। সারারাত বসে তারা গল্প কবে, স্বপ্ন বুনবে, প্রগাঢ় অনুভবে মাতিয়ে দেবে সে পাহাড়চূড়, জ্যোস্নামােড়ানাে পাহাড়চূড়া । সবসময় তার মনে হয়-কে যেন ডাকে, জ্যোৎস্নার মাঝে কে যেন অধীর উপগ্রহে অপেক্ষা করছে তার জন্য । অসম্ভব রূপবতী এ মেয়েটিকে কে ডাকে, কেন ডাকে, অপার হয়ে বসে থেকে কে শােনায় ভালােবাসার কথা! মেয়েটা হাসছে। মিজান সাহেব অবাক হয়ে দেখলেন তার মেজো মেয়ের বয়সী মেয়েটা, মেজো মেয়ের মতােই দেখতে, সুন্দর । হাসণে মেয়েটার গাল টোল পড়ে, হাসলে টোল পড়ে তার স্ত্রীর গালেও। মেয়েটা হাসলেই । মেয়েটার দিকে এবার পূর্ণ চোখে তাকান মিজান সাহেব। মেয়েটা হাসছেই, রহস্যময় হাসি! খুব সকালে ঘুম ভাঙে তিতির, প্রতিদিন। তারপর তার অপেক্ষা—অপেক্ষা একটা মানুষের জন্য। প্রতিদিন এভাবে অপেক্ষা করতে করতে একদিন একটা মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। অদ্ভুতভাবে কথা বলা মানুষটি তাকে মুগ্ধতায় ভরিয়ে দেয়। তিতি মুগ্ধ হতে হতে অনুভব করে জীবনের এক নতুন ছন্দ-দোয়েল ভালাে লাগে তার, প্রজাপতি ভালাে লাগে, নীল রঙের ঘাসফুল ভালাে লাগে। হঠাৎ একদিন। একদিন ছেলেটাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
কোথায় যেন হারিয়ে যায় সে। ঘুম থেকে উঠে নূপুর একদিন দেখল, তার বাবা বাসায় নেই, কোথায় যেন গেছেন । বাবাকে খুঁজতে থাকে নূপুর। বাবাকে খুঁজতে খুঁজতে সে অনেক কিছু ভাবে। পল্লব নামের যে ছেলেটি প্রায়ই তার বাসায় আসে, ছেলেটা আসলে কে? সে। কি তার কাছে কিছু চায়? কিছুই বুঝতে পারে না নূপুর।। দিন শেষে বাবাকে এক সময় খুঁজে পায় সে। কিন্তু এভাবে! তারপর প্রতিটা বসন্ত কেটে যায় তার, পুরনাে পাতা পড়ে নতুন পাতা গজায়, নতুন ফুল ফোটে গাছে। কিন্তু নূপুর আগের মতােই রয়ে যায়—একা একা, চুপচাপ । অন্তী, যূথী, তিতি, নূপুরকে নিয়েই ‘কেউ এসে ডেকে যায় জ্যোৎস্নায়’, ‘তােমায় আমি দেখেছিলাম বলে’, ‘যে তুমি খুব কাছের’, অথচ আজ বসন্ত’। এই চার উপন্যাস এবং এই চার উপন্যাসের মায়াবতীদের নিয়েই—চার মায়াবতী।