“ঠাণ্ডা যুদ্ধোত্তর আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাস” বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মাে: আবদুল হালিম প্রণীত ‘ঠাণ্ডা যুদ্ধোত্তর আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাস’ শীর্ষক গ্রন্থটি বর্তমান বিশ্ব পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাপকভাবে আলােচিত হবার যােগ্যতা রাখে এমন কিছুসংখ্যক বিষয়ের উপর যুক্তিপূর্ণ বিশ্লেষণে সমৃদ্ধ। বিষয়বস্তু নির্বাচন লেখকের স্ব-নির্ধারিত হলেও তিনি এতে যথেষ্ট বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন, কারণ ঠাণ্ডা যুদ্ধোত্তর কালের, বিশেষত একবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভের, অনেকগুলাে গুরুত্বপূর্ণ বিচার্যবিষয় এটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
গ্রন্থটির উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য হল লেখক তত্ত্বীয় ও আইনগত উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে আলােচ্য বিষয়সমূহকে পরীক্ষা করে দেখেছেন। এখানে তিনি উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন পণ্ডিত ও গবেষকের, যাদের লেখা গ্রন্থাবলি থেকে তিনি উদারভাবে সাহায্য নিয়েছে, বিশ্ববীক্ষা থেকে ভিন্নতর তৃতীয় বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ্যণীয়ভাবে উপস্থাপন করেছেন। এদিক থেকে বিচার করলে গ্রন্থটি অধ্যাপক হালিমের স্বাতন্ত্র ও তীক্ষ্ণ অন্তদৃষ্টিতে ভাস্বর। এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে ঠাণ্ডা যুদ্ধোত্তর কালে ভূ-রাজনৈতিক চিন্তা ভাবনার চেয়ে ভূ-অর্থনৈতিক বিবেচনাই সকল রাষ্ট্রের, বিশেষত সমসাময়িক বিশ্বে একচ্ছত্র পরাশক্তি হিসেবে বিরাজমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের, নিকট অগ্রাধিকার পাচ্ছে।
২০০১ সনের ১১ই সেপ্টম্বরের ঘটনাবলি সংঘটিত হবার পিছনে এরূপ অনুভূতি কাজ করেছে বলে লেখকের যে বক্তব্য গ্রন্থটিতে বিভিন্ন আলােচনায় পরিস্ফুট তা অমূলক নয় বলেই মনে হয়। রাষ্ট্রসমূহের মাঝে সৃষ্ট পারস্পরিক নির্ভরশীলতার এ যুগে সমকালীন বিশ্ব ইতিহাসের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক রাজনীতি তথা অর্থনৈতিক বিচার্যবিষয়সমূহ সম্পর্কে ন্যূনপক্ষে কাজ ঢালানাে গােছের জ্ঞান রাখা প্রত্যেক শিক্ষিত ব্যক্তির অবশ্য কর্তব্য হিসেবে ধরে নিলে বর্তমান গ্রন্থটি পাঠ করে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিযােগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণেচ্ছুসহ অনেকে অন্তত খানিকটা উপকৃত হবেন বলে আমার বিশ্বাস।