“দেশহীন মানুষের কথা” বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা:
দেশহীন মানুষের কথা বইয়ে গ্রন্থকার সঞ্জীব দ্রং বাংলাদেশের আদিবাসী পাহাড়ি মানুষের নিরন্তর সংগ্রামের কথা লিখেছেন। তিনি আদিবাসী জনপদে পায়ে হেঁটে ঘুরে, তাদের সাথে কথা বলে, রাতযাপন করে, গল্প শুনে, পাহাড়ি জননীর নীরব কান্না দেখে, আদিবাসী তরুণীর অসহায় চোখ ছলছল বেদনা দেখে, ভূমি হারানাে দেখে, দেশান্তর হওয়ার কষ্ট দেখে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, বাংলাদেশে আদিবাসীদের কাগজে কলমে জন্মসূত্রে ‘দেশ’ থাকলেও তাদের মানবিক অধিকার নেই, তারা দেশহীন মানুষ। যতবার ভূমি জরিপ হয় দেশে, আদিবাসী মানুষ নিঃস্ব হয়, তাদের জমি কমতে থাকে। কেউ পাশে দাঁড়ায় না ভালােবেসে। আন্তরিকভাবে ভালােবেসে। এনজিওদের সম্পর্কে প্রশ্ন রেখেছেন, গভীর ও বিস্ফোরক ভালােবাসা দরকার আদিবাসীদের এগিয়ে নেওয়ার জন্য, খুব কম সংখ্যকের এ ভালােবাসা ও আন্তরিকতা আছে। তবে আদিবাসীদের দুঃখে সমব্যথী বাঙালিদের সংখ্যা বাড়ছে। মনের গভীরে কষ্ট নিয়ে আশা করছেন, আদিবাসীদের প্রতি সত্যিকার শ্রদ্ধা ও ভালােবাসার অভাব ভবিষ্যতে উন্নয়নকর্মীদের মধ্যে থাকবে না। যখন আদিবাসীদের ঘর পুড়ে ফেলা হয়, আদিবাসীদের অজস্র মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে শেষ করে দেয়া হয়, ইকোপার্ক প্রকল্প হয়, জোর করে জমি দখল করা হয়….সকলে যেন পাশে দাঁড়ান আদিবাসীদের। তিনি বলেছেন, আদিবাসীরা এখন উন্নয়নের নানারকম হৈচৈ-য়ের মধ্যে পরিবেষ্টিত, কিন্তু এসব উন্নয়নের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে দিতে হবে, উন্নয়নে তাদের অর্থপূর্ণ অংশীদার করতে হবে। আবার বলেছেন, যারা আদিবাসীদের দুঃখ-কষ্ট-দেশান্তরকরণের জন্য দায়ী, তাদের ভালাে মানুষ হও’ এ শিক্ষা দিলেই তাে হয়ে যায়? এ জন্য নতুন একটি বিপ্লব চাই। তবুও গ্রন্থকার সঞ্জীব দ্রং এই বইয়ে আদিবাসীদের জেগে ওঠার কথা বলেছেন, স্বপ্নের কথা বলেছেন, আদিবাসীদের বিষয়টি যে এখন। আলােচিত হচ্ছে, তা বলেছেন। শেষে বলেছেন, নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামের মধ্য দিয়েই আদিবাসীদের মুক্তি সম্ভব, দেশহীন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব। সংগ্রাম নেই তাে জীবন নেই।