“গুড আর্থ” বইয়ের ভূমিকা:
কৃষিভিত্তিক, সামন্ততান্ত্রিক যে চীনের জনজীবনের আলেখ্য তুলে ধরা হয়েছে, তা থেকে সমসাময়িক চীনের সামাজিক শ্রেণীবিন্যাস, জীবনযাপন প্রণালী, সামাজিক মূল্যবােধ, বিভিন্ন শ্রেণীর পারস্পরিক সম্পর্ক বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায় । মহৎ সাহিত্যের বিশিষ্টতা এখানেই। এ কারণেই সমাজতাত্ত্বিক-দার্শনিকরা বলে থাকেন যে, কোনাে দেশ-জাতি সম্পর্কে বছরের পর বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে গেলেও সেই গভীর সত্য উন্মােচন করা কঠিন, সে সত্যটি হচ্ছে উপরােক্ত সমাজবিবর্তনের মূল শক্তি। অথচ একটি মহৎ উপন্যাস থেকে খুব সহজেই সেই সত্যটি খুঁজে পাওয়া সম্ভব। গুড আর্থ উপন্যাসটি শুরু হয়েছে ওয়াঙ লাঙ নামক যুবকের বিয়ের দিনের বিবরণ দিয়ে।
“গুড আর্থ” বইয়ের শুরু:
উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রও ওয়াঙ লাঙ। সরল গ্রাম্য যুবক। চীনের যে-কোনাে শহর বা আধুনিকতার যে-কোনাে নগরকেন্দ্র থেকে অনেক দূরের গ্রামে তার বসবাস। তার সঙ্গে তার থাকে বৃদ্ধ পিতা। নেহাত দরিদ্র তারা। এত দরিদ্র যে সকালে কাশিকাতর পিতার সামনে গরম পানিভর্তি বাটি মেলে ধরার সময় তাতে এক চিমটি চায়ের পাতা মিশিয়ে দেবার সামর্থ্য পর্যন্ত নেই। তাদের বাড়ির সবগুলাে ঘর মাটির তৈরি। নিজেদের ক্ষেতের চৌকো মাটির ইট। নিজেদের ক্ষেতের উৎপন্ন গমের খড়ে ছাওয়া তাদের চালা। তাদের এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে থাকে পানির তীব্র অভাব। পুরাে শরীর ধুয়ে স্নান করা সেই সময় অনেক বড় বিলাসিতা। তাই নিজের বিয়ের দিনেও সেই রকম বিলাসিতা করতে ভয় পায় ওয়াঙ। ওয়াঙ-এর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতাও খুব সামান্য। আসলে সে তাে ভদ্র বা গেরস্থ ঘর থেকে কোনাে মেয়েকে বউ হিসেবে পাচ্ছে না। এখন বিয়ে ব্যাপারটা খুবই ব্যয়বহুল আর গেরস্থ ঘরের মেয়েরা দামি কাপড়চোপড়ের কড়া দাবি পূরণ না-করা পর্যন্ত বিয়েতে রাজি হয় না। তাই ওয়াঙ-এর মতাে গরিবদের কপালে বউ হিসেবে জোটে দাসী-বাদি। ওয়াঙ যাকে বিয়ে করতে যাচ্ছে, সেই মেয়েটি হচ্ছে ‘হােয়াঙ মঞ্জিল’ নামক জমিদারবাড়ির আশৈশব বাঁদি। তার নাম ওলান। হােয়াঙ মঞ্জিলের বাদীদের কোন দৃষ্টিতে দেখা হত বা তাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা হত তা বােঝা যায় ওলান সম্পর্কে ওয়াঙকে বলা বেগম সাহেবার কথা থেকে। এই বেগম সাহেবা বসে থাকেন হলঘরের মধ্যে একটি উঁচু বেদিতে। মুক্তোশুভ্র সাটিনের পােশাকে আবৃত তার ক্ষুদ্র সুন্দর তনু। বলিরেখাবহুল মুখ। বানরের চোখের মতাে তীক্ষ্ন ক্ষুদ্র কালাে রেখাগুলােতে কোটরাগত চোখ। এক হাতে তীব্র নেশা-উৎপাদক চণ্ডুর পাইপের একটা প্রান্ত। ওলানকে ওয়াঙ-এর হাতে তুলে দেয়ার সময় বেগম। সাহেবা বলে—দশ বছর বয়সে এ মেয়েটা আমাদের বাড়িতে আসে, এখন তার বয়েস বিশ। এক দুর্ভিক্ষের বছর ওকে আমি কিনেছিলাম। সেবার ওর দুর্ভিক্ষপ্রপীড়িত মা-বাবা উত্তরাঞ্চল থেকে এসেছিল এখানে আহারের সন্ধানে। পেটের দায়ে মেয়েটাকে তারা বিক্রি করে দেয় আমার কাছে। দুর্ভিক্ষ শেষে তারা স্বদেশে চলে যায়