“আকাশ বাড়িয়ে দাও”বইটির প্রথমের কিছু অংশ:
আমিনের ঘরটা বেশ বড়। সামনে পিছনে বারান্দা, তার চারদিকে খােলা ছাদ। ছাদে ওঠার সিঁড়ির দরজাটা বন্ধ করে দিলে গােটা পৃথিবী থেকে এ ঘরটি আলাদা হয়ে যায়। আমিনের আব্বা দোতলাটি শেষ করে ভাড়া দেবেন ঠিক করেছিলেন। দেশ স্বাধীন হবার পর হঠাৎ করে বাজার থেকে সিমেন্ট উধাও হয়ে যাওয়ায় আর সেটি করতে পারছেন না। কাজেই সমস্ত দোতলায় আমিনের একমাত্র ঘরটা সব সময় খােলামেলা। এখানে সব সময় বাতাসের হুটোপুটি, এটি সব সময় নির্জন। | এখন রাত গভীর হয়ে এসেছে-জ্যোৎস্নার ফুটফুটে আলােতে চারদিক আলােকিত। আমিনের ঘরের ভারী পর্দা টেনে দেওয়া, তাই ভিতরে অন্ধকার গুড়ি মেরে আছে। আমিনের চওড়া বিছানায় পা ছড়িয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছে বাবুল, হাতে কাঁচের গ্লাসে দেশী মদ। ঝাঁঝালাে কটু গন্ধে ঘরে টেকা দায়। নিরীহ মদের বােতলটিতে ছিপি লাগানাে—টেবিলের উপর রাখা। আমিন ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে পা তুলে দিয়েছে টেবিলে, বইয়ের ওপর। তার হাতের সিগারেটে লম্বা ছাই জমেছে। সিগারেটের ধোঁয়া বের হবার পথ না পেয়ে ঘরের ভিতরেই পাক খেয়ে বেড়াচ্ছে। বাবুল হাতের গ্লাসটা খালি করার পর আমিন বলল, আর খাবেন না বাবুল ভাই।
বাবুল একটু হেসে পরিষ্কার গলায় বলল, কেন? বাংলা মদ ভারি খারাপ-বমি করে কূল পাবেন না। আমার অভ্যাস আছে, বাংলা বিহারী সব খেতে পারি। হখেতে আর কি, সবাই পারে। পরে দেখবেন, মনে হবে, শরীর, জামাকাপড়, হাত-পা থেকে গন্ধ বের হচ্ছে।