“অনুরন গোলক”বইটির প্রথমের কিছু অংশ:
ত্রাতিনার স্বগ্রহে প্রত্যাবর্তন
ত্রাতিনা মহাকাশযানের গােল জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়েছিল। বাইরে গাঢ় অন্ধকার মহাকাশ, কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেই বুকের ভিতরে এক ধরনের নিঃসঙ্গতা ভর করে। ত্রাতিনা বহুকাল থেকে নিঃসঙ্গ, নিঃসঙ্গতাতে সে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, স্কিনিস্কির নবম সিম্ফোনী শুনতে শুনতে সে দীর্ঘসময় জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকতে পারে।
আজকেও সে বাইরে তাকিয়েছিল, ঘুরে ফিরে বারবার তার সহঅভিযাত্রীদের কথা মনে পড়ছে। তাদের দলপতি শূরা, ইঞ্জিনীয়ার কিরি, তাদের জীববিজ্ঞানী ইলিনা নেভিগেটর থুল- আরাে কতজন। যখন ওয়ার্মহােলের প্রবল আকর্ষণে মহাকাশযানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘুরপাক খেতে খেতে অতল গহ্বরে হারিয়ে যেতে শুরু করেছিল, কী পাগলের মতই না তারা মহাকাশযানটিকে বাঁচানাের চেষ্টা করেছিল ! শেষ রক্ষা করতে পারে নি, প্রচণ্ড বিস্ফোরণে একটা অংশ ছিটকে বের হয়ে গিয়েছিল, আর ঠিক তখন মহাকাশযানের মূল কম্পিউটার মহাকাশযানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কোন ভাবে প্রবল আকর্ষণের কেন্দ্র থেকে বের হয়ে এসেছিল। ত্রাতিনা ছিটকে পড়েছিল কন্ট্রোল প্যানেলে, সেখান থেকে মেঝেতে। যখন জ্ঞান হয়েছে নিজেকে আবিষ্কার করেছে একটি ধ্বংসস্তুপে। ইমার্জেন্সী আলাে নিয়ে মহাকাশযানে ঘুরে ঘুরে সে তার সহঅভিযাত্রীদের মৃতদেহ আবিষ্কার করেছে। বিশাল একটা অংশ উড়ে বের হয়ে গেছে, সেখানে যারা ছিল তাদেরকে আর কখনাে খুঁজে পাওয়া যায় নি। অন্যদের মৃতদেহ সে গভীর ভালবাসায় স্টেনলেস স্টীলের ক্যাপসুলে ভরে মহাকাশে ভাসিয়ে দিয়েছে।
তারপর থেকে সে একা। বিধ্বস্ত একটি মহাকাশযানে বিশাল মহাকাশে হারিয়ে যাওয়া একটি তরুণী। মহাকাশযানের পঙ্গু কম্পিউটার পৃথিবীতে ফিরে যাবার চেষ্টা করে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। মহাকাশযানের জ্বালানী ফুরিয়ে আসছে। এবং একসময় ত্রাতিনা বুঝতে পারে সে আর কখনাে পৃথিবীতে ফিরে যেতে