উপন্যাসে কথক ‘আমি’ ও লেখক ‘আমি’ যখন এক হয়ে যায় তাকে বলে ‘আমি উপন্যাস’। কালোনদী সেই উপন্যাস। এর পটভূমি ঢাকা-চট্টগ্রাম-তোকিও। ব্যাপক অর্থে ব্যাংকক-দিল্লি পর্যন্ত-এর বিস্তার। তিন পর্বে এর কাঠামো রচিত। কর্মব্যস্ত নিঃসঙ্গ জাপানি নারী হিমিকোর সঙ্গে কর্মসূত্রে উপন্যাসের আমি চরিত্রের সাক্ষাৎ হয় তোকিও নগরীতে। এই পরিচয় ও সম্পর্কের টানাপোড়েনের অমোঘ কাহিনী ছিন্নভিন্ন করে উভয়কে, আধুনিক মানুষের নিঃসঙ্গতার সন্নিপাতে দগ্ধ হয় দুটি চরিত্র। চট্টগ্রামের গ্রামীণ জীবনের আবহে হিমিকোর নবজন্ম হয়ে যায়। তোকিও ও ঢাকার মেলবন্ধন উভয়কে দলিত-মথিত করে। হিমিকোকে আকৃষ্ট করে চট্টগ্রামের চাষী পরিবারের গ্রামীণ সারল্য, প্রকৃতি ও নির্ভার জীবন। আবার নায়কের পরকীয়া প্রেম ও আত্মগ্লানি উপন্যাসকে নিয়ে যায় অন্য এক জগতে, ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয় নায়িকা। আধুনিক মানুষের মনোজগতের এই আলোড়ন উপন্যাসের উপজীব্য। এমনি বিক্ষিপ্ত মানসিক অবস্থায় হিমিকো পাড়ি জমায় তোকিওর পথে আপাত প্রশান্তি ও ক্ষণকালের এক সমাধান বুকে নিয়ে। কিন্তু ওরা কেউ জানে না এর শেষ কোথায়। ঔপন্যাসিকের গদ্য রচনায় এক ধরনের অদ্ভূত দৃঢ়তা ও ঋজুতা রয়েছে আর আছে বাস্তববাদীর মতো জাদুকল্পনা।