বাঙালির স্বকীয় ভাবনার ভিত্তি নির্মাণে রবীন্দ্রনাথের অবদান অপরিসীম। প্রধানত বিশ্ববিখ্যাত কবি হওয়া সত্ত্বেও তিনি আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি ও অর্থনীতি বিষয়ে কালজয়ী সব ভাবনা ভেবেছেন। বিশেষ করে আমাদের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য থেকে শক্তি আহরণের এক ব্যতিক্রমী আহ্বান তিনি নিরন্তর করে গেছেন। সমকালীন বিশ্বায়নের এই যুগে রবীন্দ্রনাথের এই স্বদেশী চিন্তা ও চেতনা আমাদের উন্নয়ন ভাবনাকে গভীরভাবে প্রভাবান্বিত করার ক্ষমতা রাখে। বিশেষ করে বাইরে থেকে চাপানো উন্নয়ন নীতি কৌশলের চাপে পড়ে আমরা যখন আত্মশক্তি ও আত্মমর্যাদা প্রায় হারাতে বসেছি তখন রবীন্দ্রনাথের আর্থ-সামাজিক ভাবনা হতে পারে স্বদেশী উন্নয়নের দারুণ অনুপ্রেরণার উৎস। আজ আর বাংলাদেশ শুধুমাত্র প্রচলিত ভূখ-েই সীমাবদ্ধ নয়। সারা পৃথিবীর নানা কোণেই একাধিক বাংলাদেশ তার স্বকীয় বৈশিষ্ট্য নিয়েই মাথা উঁচু করে উঠে দাঁড়াচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ নানা মাত্রিক এসব বাংলাদেশকে একই সুঁতোয় গেথে দিচ্ছেন তাঁর গান, কবিতা, নৃত্যগীতসহ শিল্প সাহিত্যের নানা উপকরণ দিয়ে। বৃদ্ধিবৃত্তিক সার্বভৌমত্ব নির্মাণে তাঁর এই চলমান অবদান অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। এই বৃহত্তর ক্যানভাসেই রবীন্দ্রচিন্তাকে পরিবেশন করা হয়েছে এই বইয়ে। অর্থনীতিবিদ আতিউর রহমান রবীন্দ্রনাথের আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চিন্তাকে স্বদেশী উন্নয়নের কৌশল নির্মাণের সম্ভাবনায় অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে উপস্থাপন করেছেন এই বইতে।