ফ্ল্যাপে লিখা কথা
বিশ্বের ক্ষুদ্রতম আঙ্গিকের জনপ্রিয় কবিতা হাইকু এর উৎপত্তি জাপানে। বাঙালী পাঠকের সঙ্গে হাইকু-র পরিচয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জাপান যাত্রী’ গ্রন্থের মাধ্যমে। এরপর বিভিন্ন কবির হাতে এই বিশিষ্ট কবিতার অল্পবিস্তর চর্চা হয়েছে, কখনো বা নিরীক্ষাও। কিন্তু জাপানী ভাষায় লেখা হাইকু-র অন্তরসম্পদ অক্ষুণ্ন রেখে, সুনির্দিষ্ট মাত্রাবিভাজনে অর্থ্যাৎ ৫-৭-৫ মাত্রার বিন্যাসে যথাযথ প্রকরণসিদ্ধ হাইকু তেমন একটা দেখা যায়নি। খোদ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও বাংলা হাইকু-জগতটির দ্বার-উন্মোচনের মহৎ দায়িত্বটি পালন করেই, এক তাঁর নিজস্ব শিল্পসৃষ্টির একপাশে সরিয়ে রেখেছেন। বাংলা কাব্যধারায় হাইকু-র বিকাশ ও ঋদ্ধির ব্যাপারে শেষ পর্যন্ত মনোযোগী থাকেননি। পরবর্তীকালে যাঁরা এর চর্চাকে এগিয়ে নিয়ে এসেছেন , তাঁদের আন্তরিকতার মর্যাদা অপরিসীম। বাংলা হাইকু-র ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় তাঁরা নমস্য। তবে বাংলা হাইকু-র বিশুদ্ধ প্রকরণসিদ্ধ সৃষ্টি সম্পর্কে বিশিষ্ট কবি ও গবেষক আবিদ আনোয়ার এর ভাষ্য এখানে প্রণিধানযোগ্য। তিনি তাঁর প্রবন্ধে হাইকু-র আদি উৎপত্তি, বিভিন্ন ভাষায় এর অনুবাদ ও বিস্তৃতির ধারাবাহিকতা গবেষণার সূত্রে বলেন ‘‘….দুলাল বিশ্বাস নামরে একজন নবীন কবি এবং আশির দশকের বিশিষ্ট কবি রহিমা আখতার কল্পনা সম্প্রতি অজস্র হাইকু রচনা করেছেন যেগুলো হাইকুর জন্য আবশ্যিক ৫-৭-৫ মাত্রার নির্ভুল পঙ্ক্তিবিন্যাস ও হাইকু-র অন্তর-সম্পদ অক্ষুণ্ন রয়েছে। এগুলো পড়ে মনে হচ্ছে সঠিক প্রকরণে বাংলা হাইকুও তার যাত্রা শুরু করেছে। ….অতএব বাংলা হাইকু রচনার পথিকৃতের প্রকৃত মর্যাদা যদি কাউকে দিতে হয় তবে তাঁরা হলেন দুলাল বিশ্বাস নিজে এবং রহিমা আখতার কল্পনা। আমি তাঁদের পথ দেখিয়েছি মাত্র’।
[যথাযথ প্রকরণে বাংলা হাইকুর যাত্রা শুরু/কালি ও কলম, চৈত্র ১৪১৬]
বাংলা হাইকু রচনার পূর্বোক্ত সূচনার ধারাবাহিকতায় রহিমা আখতার কল্পনার তিনশত বাংলা হাইকু গ্রন্থটির প্রকাশ। গ্রন্থটি বাংলা কাব্যের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে গণ্য হবে বলে আমরা আশাবাদী।