ফ্ল্যাপে লিখা কথা
দুটো ফুটো আছে আমার ঘরের দেয়াল, দু দেয়ালে। ডানপাশের দেয়ালের পাশে মা’র বাথরুম, পেছনের দেয়ালের পাশে বাবার রুম। খুব ছোট্র দটো ফুটো । ফুটো দুটো দিয়ে স্পষ্ট দেখা যায় দু ঘরের ভেতরটা। সপ্তাহের একটা দিন আমি ওই ফুটো দুটোতে চোখ রাখি। রাত ঠিক দেড়টার পর। সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে, ঠিক সেই সময়টাতে । সপ্তাহের একটা দিন বাবা একটা করে মেয়ে নিয়ে আসেন বাসায়। আমাদের দারোয়নটা গেট খুলে দেন। বাবা ঢুলতে ঢুলতে, মেয়োটির কাঁধে হাত রেখে, টলমলানো পায়ে তার ঘরে ঢুকে, শব্দ করে বন্ধ করে দেন দরজাটা। তাপর ঠাস করে শুয়ে পড়েন বিছানায়, চিৎ হয়ে।
আরেক পাশে জায়নামাজে বসে থাকেন মা। দু হাত তুলে তাকিয়ে থাকেন সামনে। যেন স্রস্টা বসে আছেন সামনে, অসীম শূন্যে। মার ঠোঁট কাঁপতে থাকে, চোখ দুটোতে জলের ধারা, সমস্ত চেহারাটা কুঁচকে থাকে ছোট হয়ে।
মা হঠাৎ চিৎকার করে ওঠেন। উঠে দাঁড়ান লাফ দিয়ে। পরনের সমস্ত কাপড় টেনে ছিঁড়তে থাকেন। গো গো শব্দ করে মাথা উঁচু করে আকাশে দিকে তাকান। চোখ দুটো বড় হয়ে যায় তার, যেন ছিটকে বেরিয়ে আসবে এখনি। শরীরটা হিম হয়ে আসে আমার। দ্রুত ওখান থেকে সরে আসি ঘরের মাঝখানে। থমকে দাঁড়াই। চোখ বুজে, দুহাত দিয়ে চেপে ধরি দু কান। সমস্ত অনুভব দিয়ে চেষ্টা করি কোনো কিছু না দেখার, না শোনার। তবুও চোখের সামনে ভেসে ওঠে- বাবার বাহুলগ্নে, নতুন নতুন নারী; জায়নামাজে বসে মার আকুলতা, ব্যাকুলতা।
বাবার স্বতঃস্ফুর্ত হাসি, মার করুণ-স্বরের কান্না। চিৎকার করে উঠি আমি হঠাৎ -বন্ধ করুন আপনাদের অভিনয়, বন্ধ করুন আপনাদের ভণ্ডামি, নিছক বাঙ্গালিপনা, বন্ধ করুণ। স্টপ!’ চার দেয়ালে বাধা পেয়ে আমার চিৎকার ফিরে আসে আমার কাছেই। আমিই থেমে যাই, স্তব্ধ হয়ে যাই। নতজানু হয়ে, দুহাত কপালে ঠেকিয়ে, কেঁদে উঠি নিঃশব্দে। তারপর অনেক্ষণ পার ,বিরবির করে বলি-খুন করব আমি একটা !খুন! অথচ রাজন্যা নামে এক রাজকন্যা বসে আসে আমার জন্য, তার সমস্ত আয়োজন নিয়ে, ভালোবাসার বর্ণিল ডালি নামে!