ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা
সাদিদ আড়চোখে মেয়েটার দিকে তাকাল। উদাস হয়ে তাকিয়ে আছে সে সামনের দিকে, যেখানে কিছু নেই, শূন্য।খুব ধীরে পায়ে আরো একটু এগিয়ে গেল সে, ‘জানেন, কিছুক্ষণ আগে একটা মেয়ে মারা গেছে গলায় ওড়না পেচিয়ে!’
সরল চাহনিতে মেয়েটা এক পলক সাদিদের দিকে তাকাল, কিন্তু বলল কিছু সে। হঠাৎ ছাদের এই নির্জনতায়, কারো গলার স্বর শুনে যেরকম চমকে ওঠার কথা, সেরকম চমকালও না মেয়েটা। সাদিদ জানে, মেয়েদের দুটো না, তিনটে চোখ। শরীরের সামনের দু চোখ দিয়ে তারা যা দেখে, তার চেয়ে বেশি দেখে ভেতরে যে চোখটা আছে তা দিয়ে। আরো দুটো ঘটনা বলার পর চেহারাটা হাসি হাসি করে ফেলল সাদিদ, ‘মন খারাপ হয়ে গেল আপনার! আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে-প্রবল ঝড়ের মাছে সব ডাল-পালা-পাতা হারিয়েও যে গাছটা দাঁড়িয়ে থাকে, ওই গাছটা কদিন পর আবার যথন নতুন পাতা জাগায় নিজের বুকে, আস্তে আস্তে বাড়িয়ে নতুন বাহু, ওটাই আনন্দের। মানুষের জীবনটাও এরকম।এখানে কষ্ট আছে, অপমান আছে, ঘৃণা আছে, বর্বরতা আছে, প্রতারণা আছে, অনেক কিছু আছে।এসব ঘিরেই যে জীবন, সেটাই আনন্দের জীবন, আনন্দময় বেঁচে থাকা।’‘আমাকে দেখে আপনার এসব কথা মনে হচ্ছে কেন?’ সাদিদ মাথাটা নিচু করে আবার তুলে বলল, ‘তার আগে আমরা কি আমাদের নামটা জানতে পারি?’ সাদিদ উত্তর পাওয়ার আগেই বলল, ‘আমি সাদিদ, সাদিদ নাজুস।’ মেয়েটা আবার শূন্য দিগন্তের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আমি অর্না, অর্না তাবাসসুম।’ অর্নার হাতের ছো্ট্ট টবে রাখা গাছটার দিকে তাকায় সাদিদ, ‘ভালোবাসা হচ্ছে টাবে এরকম গাছের মতো-রোদে ভেজাতে হয়, মাঝে মাঝে পানিতেও। ছুঁয়েও দেখতে হয় কখনো কখনো। নিষ্ঠা নিয়ে এক পরম পরিচর্যা। তবেই সে প্রস্ফুটিত, সুবাসিত, আর বর্ণিল।’ চোখ মেলে এই প্রথম অর্না সাদিদের দিকে তাকাল। সাদিদ আলতো ভাবে ঘুরে দাঁড়াল, ‘একটা প্রশ্ন করি-একজন মানুষের জীবনে কতবার ভালোবাসা আসতে পারে? সাদিদ অর্নার চোখের দিকে তাকাল, নিজেই উত্তর দিল, ‘অনেকবার, মৃত্যু কাছে না আসা পর্যন্ত। যাদের জীবন ভালোবাসা থাকে না, তারা প্রাণহীন মানুষ, উপরে ফেলা গাছের মতো।’