ফ্ল্যাফে লেখা কিছু কথা
বিপাশা হায়াত 1971 সালের 23শে মার্চ ঢাকায় জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর বাবা প্রথিতযশা নাট্যব্যক্তিত্ব আবুর হায়াত তাঁর আদর্শ। মা শিরিন হায়াত তাঁর সকল কাজের উৎসাহীদাত্রী।
সাত বছর বয়সে বাবার চাকুরীসূত্রে চলে গিয়েছিলেন সপরিবারে লিবিয়ায়। ভূমধ্যসাগরীয় সে অঞ্চল এবং সেখানকার প্রাচীন রোমান সভ্যতার নিদর্শন বিপাশা হায়াতকে গভীর ভাবে রেখাপাত করে। ভিকারুননিসা নুন স্কুর এন্ড কলেজ থেকে শিক্ষাপর্ব শেষে বিপাশা হায়াত 1998 সালে ঢাকা ইউনিভার্সিটি চারুকলা অনুষদের ড্রইং এন্ড পেইন্টিং বিভাগ থেকে এফ.এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি একাধারে মঞ্চ ও টিভি অভিনেত্রী, চিত্রনাট্যকার ও চিত্রশিল্পী।টেলিভিশন নাটকে অভিনয়ের জন্য তিনি বিভিন্ন সম্মান সূচক পদকসহ , অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন । জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত দুটি মুক্তিযুদ্ধ বিত্তিক চলচ্চিত্র আগুনের পরশ মণি ও জয়যাত্রাতে তিনি অভিনয় করেছেন এবং আগুনের পরমণি চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন।
লেখক হিসেবেও তাঁর পরিচিতি আছে।
ভূমিকা
আমার আসলে লেখক হবার কথা ছিল না। সাদা পাতা ভাষা দিয়ে ভরিয়ে দিতে পারলেই কেউ লেখক হয়ে যায়না।তবে, কেউ যখনই আমাকে লেখার জন্য অনুরোধ করেন, আমি চোখ কান বন্ধ করে হ্যাঁ করে দেই। ছোট বেলায় যখন গল্পের বই পড়তাম, মনে হত,আমিও কি এমন গল্প লিখতে পারবো না? এই ভেবে একবার ভয়ংকর একটি কাজ করলাম। স্যার আর্থার কোনান ডয়েন এবং সত্যজিৎ রায়ের সাথে প্রতিযোগিতায় নামলাম!! আমার জীবনের প্রথম গল্প। মূল চরিত্র- শার্লক হোমস,ফেলুদা এবং তাদের সহকারীবৃন্দ। আমি তখন ক্লাস এইটে। ভিকারুন নিসা নুন স্কুলে পড়ি। গল্পের নাম লন্ডনে ফেলুদা। ছাপা হয়েছিল স্কুলের বার্ষিক ম্যগাজিন নুন টাইডে। আমার জায়গায় বড় কোন লেখক হলে বলা হত, এর পর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকানো হয়নি। কিন্তু আমি কলম ফেলে দিয়ে অভিনেত্রী হবার জন্য কাঠ-খড় থেকে নিজেক পোড়াতে শুরু করলাম । এবং অভিনয়ের জন্য পান্ডলিপি পড়তে পড়তে মনে করলাম, এমন নাটক তো আমিও লিখতে পারি। আসলে কাজটা এতো সহজ নয়। ভীষণ কঠিন । আমি আবরো কাঠ-খড়ের সাথে নিজেকে পোড়াতে শুরু করলাম নাটক লেখার জন্য । আমার সামনে অনুপ্রেরণা ছিল, আমার বাবার লেখা এবং অভিনীত অসাধারণ টিভি নাটক গুলোর পান্ডুরিপি এবং তাঁর সংগ্রহে থাকা নাট্যশিল্পের নানা বিষয়ের বই। 1999 সালে, আমার বিয়ের পর, যখন সংসার আমাকে ভীষণভাবে টানতে শুরু করল আমার স্বামী আমকে নাটক লেখার ব্যাপারে আবারও সাহস ও অনুপ্রেরণা যোগাতে থাকল। আমি অসীম সাহসের পরিচয় দিয়ে একের পর এক নাটক লিখে চললাম। তবে লেখার জন্য পড়তে হয় বহুগুন। সুবিধে ছিল এই যে, বই পড়া আমার ছোট বেলার নেশা। আরেকটি নেশা আমাকে পেয়ে বসল, মানুষের জীবনের গল্প শোনা । মানবজীবন কথা যেন লেখনীর খনি।
এই বইটিতে আমার কোন নাটক ছাপা হচ্ছেনা। শুধুই গল্প। অথবা এগুলো আদতেই গল্প হয়ে উটতে পেরেছে কিনা, সেটা পাঠকের বিচার্য। আদি কম্বল, নুরুন্নাহারের দ্বৈতজীবন এবং শুন্য মানব গল্প তিনটি দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়েছিল, জনপ্রিয় কথাশিল্পী , সাংবাদিক আনিসুল হকের আগ্রহে। তাঁর প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। তাঁর কাছ থেকে পাওয়া সাহসেই বাকি দুটি গল্প লিখে ফেললাম। প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়ছিল বলে বরেণ্য শিল্পী এবং শিক্ষক কাইয়ূম চৌধুরী এবং দুইজন বিশিষ্ট্ চিত্রশিল্পী ও অগ্রজ অশোক কর্মকার এবং মাসুক হেলার আমার গল্প গুলোর জন্য ইলাসট্রেশান করেছিল। সেই অসামান্য প্রাপ্তির আনন্দ এ বইটির মাধ্যমে পাঠকের সাথে ভাগাভাগি করে নিলাম।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা নেই আমার বন্ধু ও স্বামী তৌকির আহমেদের কাছে। সে পাশে থেকে ক্রমাগত অনুপ্রেরণা না যোগালে আমি হয়তো একটি অর্থহীন জীবন কাটাতাম। কৃতজ্ঞতা আমার দুই সন্তানের প্রতি, যারা আমার লেখার জন্য সময় এবং সুযোগ করে দিয়েছে হাসিমুখে। ভয় হয়, বড় হয়ে ওরা এসব পড়ে হাসবে না তো?
বইটির প্রচছদ আমারই করা। কিন্তু এব্যাপারে ফোটোশপে কাজ করতে আমাকে সাহায্য করেছে্ ইনজিনিয়াসের তাফসির রাব্বি। তাকেও ধন্যবাদ। শব্দ শিল্প প্রকাশনীর শরিফ সাহেব কেন চোখ বন্ধ করে আমার গল্পের বই বের করেছেন, তিনি এবং সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ কি জানে? জানলে আমাকে জানাবেন। তাকে আমি অলেখকসুলভ আচরণে যথেষ্ট বিপদে ফেলেছি। কিন্তু তবু তিনি ছিলেন অবিচলিত এবং আত্নবিশ্বাসী। বিশেষ কৃতজ্ঞতা তাঁর প্রতি। এই গল্প গুলো অনেকটা মানুষের মনোজাগরিক জটিলতারই প্রকাশিত রুপকে তুলে ধরার প্রচেষ্টা। পাঠকের মনোজগতকে যদি তা একটুও স্পর্শ করে, তবে আমি সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব। আর যদি স্পর্শ না করে , তবু এই অসাধারণ সুন্দর পৃথিবীতে আমাকে স্থান দেবার জন্য সৃষ্টিকর্তার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা আমৃত্যু শেষ হবেনা।
বিপাশা হায়াত
সূচিপত্র
*ঘুম ভাঙ্গা মানুষের হল্প
*আদি কম্বল
*নূরুন্নাহারের দ্বৈত জীবন
*শূন্য মানব
*মানুষ অথবা কিউই ফলের নেশা