ফ্ল্যাপে লিখা কথা
১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্দের সর্বত্যাগী এক শহীদ পরিবার আছিয়াদের।। পিতা ও স্বামী স্বাধীনতা সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে শহীদ হয়। আছিয়া ও তার মা জমিলাও মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। পাক সেনা ও রাজাকারদের বন্দী হয়ে পাশবিক নির্যাতনের স্বীকার হায়েছে মা ও মেয়ে।
বাবা আহাত মিয়া গুরুদাসপুর থানা নায়ায়ণপুর গ্রামের একজন হগলীব ফেরিওয়ালা ব্যবসায়ী। বাঁশ,বেতের ও সেলাইয়ের বিভিন্ন দ্রব্যাদি এবং খাদ্যদ্রব্য আছিয়া ও তার মা জমিলা তৈরি করত বাড়িতে। আর আছিয়ার বাবা তা ফেরী করে গ্রামের হাটে বাজারে বিক্রি করত। তিনজনের সংসার খুব ভালভোবেই চলে যেত। অপূর্ব সুন্দরী ভরা যৌবনের আছিয়া বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। খুব আদর ও সুখের সাথেই দিন কাটাচ্ছিল।
মুক্তিযুদ্ধের ডাক এলে কলেজ ছাত্র বিচ্ছু বাহিনীর শোয়েব আহাদ মিয়াকে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করে এবং তার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের খবরা খবর ও উপাদান তথা হাত বোমা, গ্রেনেড, গোলাবারুদ ও অন্যান্য জিনিসের যোগান দিত ও বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছু বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে আদান প্রদান করত। আহাদ মিয়া শোয়েবকে বাড়িতে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। একদিন আহাদ মিয়া রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ে শহীদ হয়। রাজাকাররা আছিয়াদের বাড়িতে আক্রমণ করে মা ও মেয়ের উপর পাশবিক নির্যাতন করে। শোয়েব আাছিয়াকে বিয়ে করে তাদের সংসারের হাল ধরে এবং আছিয়া ও তার মা জমিলাকে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করায়। আছিয়া ও তার মা প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বশস্ত্র যুদ্ধ করে। একযুদ্ধে শোয়েব শহীদ হয়। মা ও মেয়ে আহাদ মিয়া ও শোয়েবের পথ ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। একসময় তারাও বন্দী হয়ে নাটোরের পাকিস্তানি মিলিটারী ক্যাম্পে বন্দী জীবনযাপন করে।
১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরে বিজয় দিবসে আছিয়া ও জমিলা মুক্তি পায়। আছিয়া শ্বশুর বাড়ি থেকে প্রত্যাখ্যিত হয়। জমিলার ভাই ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজনও স্থান দেয় না তাদের। অবশেষে আহাদ মিয়ার ছোট্র ভিটেতেই মা ও মেয়ে ফিরে এসে নীরবে বাস করতে থাকে। ইতোমধ্যে স্থানীয় রাজাকার ও স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পূর্ণবাসন চলছে। তাদের নজর পড়েছে মা ও মেয়ের উপর। তারা বিভিন্ন অর্থের লোভ ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে তাদের উপভোগ করতে চায়। মা মেয়ে তা প্রত্যাখ্যান করে নিরবে সময় পার করে।
এদিকে আছিয়া মা হতে চলেছে। গর্ভপাত করার জন্য তার মা চাপ দিচ্ছিল। আছিয়া তাতে রাজী হয় না। যদিও সে রাজাকার ও পাকিস্তানিদের দ্বারা পাশবিকভাবে নির্যাতিত হয়েছে, তবুও তার বিশ্বাস সে শোয়েবেরই সন্তানের মা হতে চলেছে। সে একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে সন্তান উপহার দিবে। তাকে কেউ বিশ্বাস করবে না বলে তার মা বারবার তাকে বোঝাতে চাইলেও আছিয়া এই অফুটন্ত ফুল পবিত্র বিশ্বাস করে এই ফুলকেই বাঁচানোর জন্য আবারও যুদ্ধ করছে।