নির্বাচিত বেগম : অর্ধশতাব্দীর সমাজচিত্র ১০৪৭-২০০০
৫০ বছর ধরে প্রকাশিত সুপরিচিত বেগম পত্রিকার নির্বাচিত প্রবন্ধ সংকলন নির্বাচিত বেগম : অর্ধশতাব্দীর সমাজচিত্র ১৯৪৭-২০০০ তিন খণ্ডে প্রকাশিত হলো।
১৯৫০ থেকে সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকা কলকাতায় প্রকাশিত হতো। এই পত্রিকার লক্ষ্য ছিল বাঙালি মুসলিম নারীদের কাছে পৌঁছোনো- তার চেয়ে বড়ো পরিসরে যদি যায়, তা হবে উপরি পাওনা। আশা করা গিয়েছিল, যাদের উদ্দেশে পত্রিকা প্রকাশ করা, এটি হয়ে উঠবে তাদের কণ্ঠস্বর। শিক্ষিত পুরুষ ধরে নিয়েছিল, এটি মেয়েদের রান্না-বান্না, সীবনকর্ম ও শিশুপালনের জ্ঞানদায়ক; যেসব মেয়ের লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ পায় না, তাদের শখের সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্র; অথবা যেসব পুরুষ নিজের নামে লিখতে চান না, স্ত্রীর নামে লেখা ছাপিয়ে সন্তোষলাভ করতে ভালোবাসেন, এটি তাঁদের জন্যে।
এই সংকলন শুরু হয়েছে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামে নারীর অংশগ্রহণের কথা দিয়ে- বাঙালি-অবাঙালি, হিন্দু-মুসলমান-নির্বিশেষে। বস্তুত সেই সংগ্রামে বাঙালি মুসলিম নারীর ভূমিকা খুব সামান্যই ছিল। তার কারণ শিক্ষা-দীক্ষায় ও সামাজিক-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তার পশ্চাৎপদতা। নানা সংস্কারের জাল ও বাধা-নিষেধের শৃঙ্খল সে ছিন্ন করতে শুরু করেছে মাত্র। এক অর্থে, সেই জাল ভেদ করার এবং সেই শিকল বিকল করার কাহিনীই বর্ণিত হয়েছে এই সংকলনের পৃষ্ঠাগুলোয়।
পঞ্চাশ বৎসরাধিকালের বেগম পত্রিকা থেকে মালেকা বেগম যে-সংকলন তৈরি করেছে, তাতে নারীর অগ্রগতির ইতিহাস যেমন ধরা পড়েছে, নারীর প্রতি বহু প্রতিকূলতার কথাও তাতে আছে। তবু, শেষ পর্যন্ত মনে হয়, নারীর প্রগতি বোধহয় আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। আজো বাংলাদেশে চেষ্টা চলে গৃহকোণে নারীকে আবদ্ধ করে রাখার। তবে এই সংকলিত ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, আপন ভাগ্য জয় করার সংগ্রামে নারী অপ্রতিরোধ্য।
মালেক বেগম (জ. ১৯৪৪) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট নারীনেত্রী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে অনার্স (১৯৬৫), এম.এ (১৯৬৬) এবং সমাজবিজ্ঞানে এম.এ (১৯৬৮), ডিগ্রি অর্জন করেন। এম.ফিল ১ম পর্ব (১৯৯৩) শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘যৌতুকের সামাজিক রূপ ও বাংলাসাহিত্যে তার প্রতিফলন’ বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেছেন (২০০৪)।
ষাটের দশকের ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী নারী আন্দোলনে যুক্ত হন ১৯৬৮ সালে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠক ছিলেন। ১৯৬৯ সালে কবি সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত মহিলা সংগ্রাম পরিষদ ও ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত পূর্বপাকিস্তান মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদিকা ছিলেন। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সভানেত্রী কবি সুফিয়া কামালের সঙ্গে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদিকা হিশেবে নারী আন্দোলনের কাজ করেছেন। নারী উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিশেবে তিনি বেইজিং বিশ্বনারী সম্মেলনের (১৯৯৫) আগে ও পরে বাংলাদেশের নারী উন্নয়ন, সমতা ও শান্তির লক্ষ্যে সরকারি- বেসরকারি উদ্যোগের সাথে যুক্ত আছেন। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন্স স্টাডিজ বিভাগে খ-কালীন শিক্ষক হিশেবে সম্পৃক্ত রয়েছেন। মালেকা বেগম লিখছেন ষাটের দশক থেকে। তাঁর লেখা বইয়ের সংখ্যা ২০। নারী ও মানবাধিকার আন্দোলনের কাজে সফর করেছেন ১২টি দেশ। জাতীয দৈনিকগুলোতে নিয়মিত লিখছেন। বেতার-টিভিতে নিয়মিত আলোচক। ‘আমি নারী’ চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট লেখক। সুফিয়া কামালের দুটি গল্পের নাট্যরূপ দিয়েছেন বাংলাদেশ টেলিভিশনে।
পেশাগত জীবনে ছিলেন বাংলা একাডেমির গবেষক, কনসার্ন উইমেন ফর ফ্যামিলি প্ল্যানিং-এর মাঠকর্মী, সচিত্র সন্ধানীর নির্বাহী সম্পাদক, গণসাহায্য সংস্থার নারী উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ, প্রকৃতি (পাক্ষিক)-এর নির্বাহী সম্পাদক।
মা : ফাহিমা বেগম (প্রয়াত); বাবা : আব্দুল আজিজ (প্রয়াত)। ব্যক্তিগত জীবনে এক মেয়ে ও এক ছেলের মা। নাতি-নাতনীর নানী-দাদী। স্বামী মতিউর রহমান দৈনিক প্রথম আলো’র সম্পাদক।