ফ্ল্যাপে লেখা কথা
জুলফিকার নিউটনের রচনায় একই সঙ্গে মিশে থাকে যুক্তিবাদী বিশ্লেষণ, দার্শনিক মনন ও হার্দিক সংবেদন। তাঁর দেখার ধরন স্বতন্ত্র, লেখার ভঙ্গি স্বচ্ছু। গভীর কথাকেও নিতান্ত সহজ করে বলতে পারেন তিনি। যে প্রসেঙ্গিই খিছু বলুন না তিনি তাঁর বক্তব্য শুনতেই হয়। তাঁর চিন্তা ঋজু ও যুক্তিপূর্ণ, মতামত দ্বিধাহীন ও অভিজ্ঞতাপুষ্ট। প্রসঙ্গ সাময়িক হলেও জীবনবোধ থেকে উৎসারিত বলে প্রতিটি মতামত অমূল্য। বঙ্গবন্ধু ও বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম গবেষণা গ্রন্থে, বঙ্গবন্ধু ও বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম , বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের রাজনীতি, গণতন্ত্রের সংস্কৃতি, বিপ্লবের তত্ত্বচিন্তা, সমাজ সংগঠন প্রসঙ্গে, সাম্যবাদের সংকট, সাম্যবাদ ও রুশবিপ্লব, ধর্মনিরপেক্ষ, রাষ্ট্র, রাজনীতি চালচিত্র নারীমুক্তি ও শিল্পবিপ্লব, প্রগতির পরিক্রমা, নীতিবোধ ও মূল্যবোধ, যুক্তিবাদ ও মানবমুক্তি, মক্তির মনস্তত্ব, মহত্ত্ব ও মনুষ্যত্ব, মানবপ্রকৃতি ও মুক্তসমাজ, উদারতন্ত্র ও মানবতন্ত্র, উন্নয়নের তত্ত্বচিন্তা, গণতন্ত্রের দিগদর্শন, গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ, গণতন্ত্র ও সেক্যুলারিজম , বিকল্প বিপ্লব, সুস্থ সমাজের সন্ধানে প্রবন্ধে মননের সঙ্গে উপলব্ধি এক অসাধারণ রাসায়নিক সংমিশ্রণে গড়ে উঠেছে এক সম্পূর্ণ জীবনবোধ চিন্তার স্পষ্টতায়, ভাষার স্বচ্ছতায়, বিশ্লেষণের ব্যাপকতায়, উপলব্ধির গূঢ়তায়, প্রত্যয়ের দৃঢ়তায় জুলফিকার নিউটনের প্রবন্ধগুলি আক্ষরিক অর্থেই প্রবন্ধ।তাঁর একটি লেখাকেও অস্বীকার করা যায় না। এক কথায় নস্যাৎ করে দেওয়া যায় না তাঁর চিন্তার যুক্তি পরম্পরাকে। তিনি সেই বিরল প্রাবন্ধিকদের একজন যার রচনা পরবর্তীকালে হারায় না প্রাসঙ্গিকতা, যার চিন্তা আমাদের বহু ভাবনাচিন্তার সমস্যা সংকটের জট ছাড়াতে, কর্মপন্থা নির্বাচন করতে সহায়ক হয়ে উঠে। জুলফিকার নিউটনের প্রবন্ধ এ প্রায় সর্বত্র অসামান্য অন্তদৃষ্টি ও ভাষার নিপুণতার লক্ষণীয়। তাঁর বৈদগ্ধ এবং সংবেদনশীলতা , তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির মৌলিকতা এবং যুক্তিবিন্যাসের দৃঢ়তা, তাঁর ভাষার গতিশীলতার লাবণ্য পাঠক হিসাবে আমাদের অভিভূত করে। সাম্প্রতিক লঘুচিত্ততার আবহে বীতশ্রদ্ধ, পৈশূন্যজারিত প্রতিন্যাসের আঘাতে আর্ত, কোন এক সদাশয় পাঠক যদি বাংলা ভাষায় মননশীল এবং সরস সাহিত্যের স্বাদ পেতে চান তবে তাঁর পাঠ্যক্রমে জুলফিকার নিউটনের প্রবন্ধাবলীকে অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।