অন্যজীবন

৳ 225.00

লেখক
প্রকাশক
আইএসবিএন
(ISBN)
9789845980487
ভাষা বাংলা
পৃষ্ঠার সংখ্যা ১১২
সংস্কার 4th Printed, 2017
দেশ বাংলাদেশ

“অন্যজীবন” বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা:
সামাজিক ইতিহাস রচনার অন্যতম উপাদান আত্মজীবনী, এ ধরনের রচনার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি কিছু সামাজিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে। জানতে পারি রচয়িতার সামাজিক অবস্থান এবং ঐ অবস্থান নির্ধারণ করতে পারলে একটি বিশেষ সমাজে, একটি শ্রেণীর সামাজিক চালচলন, মূল্যবােধ স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠবে আমাদের সামনে।
বাংলা ভাষায় আত্মজীবনীর সংখ্যা খুব বেশি নয়। রচয়িতাদের মধ্যে খ্যাত ও স্বল্পপরিচিত ব্যক্তি রয়েছেন। আবার এমন অনেকে আছেন যারা এখনও টিকে আছেন শুধুমাত্র আত্মজীবনীর মাধ্যমে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সামগ্রিকভাবে বাংলা সাহিত্যের এশাখাটি যথেষ্ট দুর্বল।
‘অন্যজীবন’, বাংলা ভাষার এই শাখায় একটি উল্লেখযােগ্য সংযােজন। আত্মজীবনীতে ‘আমি’ থাকবেই কিন্তু সে ‘আমি’ যদি প্রবল হয় তবে পরিবেশ, সমাজ সব আড়াল হয়ে যায় । জাহানারা ইমামের আত্মজীবনীতে এই ‘আমি’ কখনও প্রবল হয়ে ওঠে নি এবং এ কারণেই তা উল্লেখযােগ্য। বিগত শতকের ত্রিশ ও চল্লিশ দশকের রক্ষণশীল বাঙালি মুসলমান পরিবারের একটি মেয়ের শৈশব ও প্রথম যৌবনের চোখ দিয়ে দেখা সেই সময়ের এক অনন্যসাধারণ চিত্র—অন্যজীবন।

শহীদ জননী হিসেবে অধিক পরিচিত জাহানারা ইমাম বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে এক অনন্য নাম। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও তার বাস্তবায়ন থেকে শুরু করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আহবায়ক হিসেবে বাংলাদেশের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের মাঝে তিনি অন্যতম। জাহানারা ইমামের জন্ম অবিভক্ত বাংলার মুর্শিদাবাদ জেলায়, ১৯২৯ সালের ৩ মে। রক্ষণশীল পরিবারে জন্ম হলেও ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পিতা আবদুল আলী তাকে পড়ালেখা করান। পরবর্তীতে পুরকৌশলী স্বামী শরীফ ইমামও তাঁর পড়ালেখায় উৎসাহ যোগান। ১৯৪৫ সালে রংপুরের কারমাইকেল কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে কলকাতার লেডি ব্রাবোর্ন কলেজ থেকে ১৯৪৭ সালে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ১৯৬৫ সালে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ করেন। চাকরিজীবন শুরু করেন বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মাধ্যমে। ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৬০ পর্যন্ত ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্কলার এই কৃতি নারী ষাটের দশকের ঢাকার সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মহলে তাঁর অসাধারণ ব্যক্তিত্বের জন্য ছিলেন সুপরিচিত। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বড় ছেলে শাফী ইমাম রুমী ক্র্যাক প্লাটুনের গেরিলা যোদ্ধা ছিলেন। অসম্ভব মেধাবী রুমী তাঁর উজ্জ্বল ভবিষ্যতকে উপেক্ষা করে স্বাধীনতা সংগ্রামকে বেছে নিলে তিনি তাকে অনুপ্রেরণা যোগান ও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গোপনে সাহায্য করে চলেন যোদ্ধাদের। যুদ্ধে রুমী ধরা পড়লেও তাঁর আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি ও তাঁর স্বামী ক্ষমা চাইতে রাজি হননি ঘাতকদের কাছে। তিনি এই যুদ্ধ চলাকালে রচনা করেন তাঁর বিখ্যাত দিনলিপি, যা পরবর্তীতে ‘একাত্তরের দিনগুলি’ নামে প্রকাশিত হয় এবং বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত জাহানারা ইমাম এর বই সমগ্র পাঠকের কাছে সমাদৃত হয়েছে, এর একটি বড় কারণ হলো তাঁর রচনার হৃদয়গ্রাহীতা ও আবেগের বহিঃপ্রকাশ। তিনি স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ হিসেবে গড়ে তোলেন ‘ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি’। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, রাজনৈতিক কর্মীবৃন্দ, তরুণ প্রজন্মের সক্রিয় সমর্থনে গড়ে তোলেন গণ আদালত। জাহানারা ইমাম এর বই সমূহ হলো ‘অন্য জীবন’, ‘গজকচ্ছপ (শিশুতোষ)’, ‘সাতটি তারার ঝিকিমিকি (শিশুতোষ)’, ‘ক্যান্সারের সঙ্গে বসবাস’, ‘প্রবাসের দিনলিপি’ ইত্যাদি। মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৯৪ সালের ২৬ জুন মিশিগানে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।


বই সম্পর্কে কোন জিজ্ঞাসা বা মতামত থাকলে আমাদেরকে জানান
শেয়ার করুন

লেখকের অন্য বইসমূহ