ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা
নাসরিক জাহানের লেখায় একসময় আমরা এরকম দেখতে পাব যে, স্বেচ্ছাচারিতার খেলায় মেতে ওঠে চরিত্রগুলো, চরিত্রগুলো ধ্বংসাত্মক নয়, খানিকটা এলোমেলো। বিক্ষত, রক্তাক্ত, আত্মবিশ্লেষণে কাতর। নিরীক্ষপ্রবণতায় তিনি ভাঙেন প্রচলিত ফর্ম। ‘উড়ুক্কু’, উপন্যাসে দেখি নীনা নামের এক ডিভোর্সি মেয়েকে, যে জীবন যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত। গর্ভের সন্তান নিয়ে জটিল সঙ্কটে বিপদসঙ্কুল পথ থেকে পরিত্রাণের জন্যে যে আলোঅন্ধকারময় পৃথিবী ধরে ছুটছে। আবার ‘চন্দ্রের প্রথম কথা’-য় দেখি কাব্যিক আর রূপকের নিরীক্ষাধর্মী এর স্বাপ্নিক জগৎ-যেখানে স্বর্গ থেকে নিক্ষিপ্ত নারী অমৃতার জন্য সমুদ্রপারে অপেক্ষা করছে এক মেষপালক তামাটে যুবক। আবার সোনালি মুখোশের রূপক ফর্ম থেকে বেরিয়ে বয়ান হয়েছে কী করে মিথ্যার শিক্ষাজীবনে অঙ্গ হয়ে ওঠে। নিমি তার স্বামীর সংসারে প্রতিনিয়ত বাঁচার লড়াইয়ে মিথ্যাচারণ করে অন্ধকারে যেতে থাকে- আরেক কেন্দ্রীয় চরিত্র জাহিদ বাবার অবৈধ সন্তানের খোঁজে চলে যায় মিথ্যা গ্রামে-যেখানে কবর থেকে দুমাথার অজগর উঠে আসে। তাঁর উপন্যাসে ফ্রয়েডীয় মনোবিকলনতত্ত্ব, ব্যক্তিমানুষের উৎকণ্ঠা, মনস্তাপ, ভয় এই বিষয় বিচিত্রার সাথে আসে। এ ছাড়াও আত্মপীড়ন, রোমান্টিক চেতনার বলয়, তত্ত্বদর্শন নির্ভরতা, ক্ষয়। এইসবের পাশাপাশি থাকে নিটোল কাহিনী। মানোবিকার কখনও ক্লেদজ, কখনও অলঙ্কারময় ভাষার মধ্য দিয়ে গভীরভাবে উপস্থাপিত হয়। ….. প্রতিটি উপন্যাসে চরিত্রগুলো বেড়ে উঠেছে রক্তপাতময় দ্বন্দ্ব আর রুঢ় বাস্তবকে সামনে রেখে। সৃষ্টি হয়েছে স্বপ্নাচ্ছন্ন উড্ডীন মানসের খেয়ালিপনা। এবং এইভাবেই নাসরীন জাহান তাঁর খেলার জগতে হয়ে উঠেছেন স্বতন্ত্র।
সূচিপত্র
*উড়ুক্কু
*চন্দ্রের প্রথম কলা
*সোনালি মুখোশ