ফ্ল্যাপে লিখা কথা
দেশ-বিদেশে নেতা অনেকেই জন্মেন। তাঁর কেউ ইতিহাসের একটি মাত্র পংক্তি, কেউ একটি পাতা, কেউ বা একটি অধ্যায়। আবার কেউ বা নিজেই সমগ্র ইতিহাস। আর বঙ্গবন্ধু সারা বাংলার এই সমগ্র ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু মৃত্যুত্রাসকে উপেক্ষা করে একটি ভূ-খণ্ডকে বাঙালির চিন্তা- চেতনায় সত্য করে তুলেছেন, স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের পত্তন করেছেন। এখানেই তঁঅর নেতৃত্বের ঐতিহাসিকতা।
এই ঐতিহাসিকতা অর্জন ও স্বদেশকে প্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেয়ার পথে দেশি-বিদেশি প্রতিক্রিয়াশীল ও স্বার্থবাদীদের কাছ থেকে পদে পদে বাঁধা পেয়েছেন। এই লড়াই করতে করতেই একদিন তাঁকে দিতে হয়েছে নিজের জীবনও!
নির্যাতিত মানবাত্মার ক্রন্দন বঙ্গবন্ধুকে অস্থির, অশান্ত করে তুলেছিরো। এজন্যেই তিনি হুংকার তুলেছিলেন সকল প্রকার দুঃশাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে, ভূমিকা নিয়েছিলেন অমিত এক অক্লান্ত যোদ্ধার। ঊনবিংশ শতাব্দীর গীতিকবি ‘ল্যামারটিন’ তাঁর স্বদেশ ফ্রান্সের বৈদেশিক মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করে রাজনীতির মূল কথাটি ব্যক্ত করে উল্লেখ করেন- `Affection, always affection for the people and the people in return will lend their hearts’ ‘বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে এই কথাগুরো সর্বোতভাবে প্রযোজ্য।
ল্যামারটিন আর বঙ্গবন্ধুর মধ্যে এক শতাব্দী কালের ব্যবধান। কিন্তু রাজনীতির ক্ষেত্রে তাঁদের দুজনের অভিজ্ঞতা প্রায় একরকম। তাঁদের দুজনকেই আকুল করে তুলেছিলো নিপীড়িত ও শোষিত মানবাত্মার আকুল ফরিয়াদ। উভয়েই জনগণকে ভালবেসে তাদের দুঃখ-দুর্দশা দূর করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। জালিমদের হাত থেকে অসহায় মানুষকে বাঁচাতে দুজনেই নিজেদের জীবন বিপন্ন করেও প্রতিবাদমুখর হয়েছিলেন। তাঁরা প্রতিদানে পেয়েছিলেন জনগণের প্রাণঢালা ভালোবাসাও।
বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে ট্রাডিশন্যাল রাজনীতির বিরুদ্ধে ফুটে ওঠে বলিষ্ঠ প্রতিবাদ। রাজনীতিকে তিনি রাজনীতি হিসেবে দেখেছেন। নিজেকে একান্ত হয়ে দিয়েছেন জনগণের সাথে- তাই তাঁর কণ্ঠে ফুটে ওঠে সবার আগে- ভায়েরা আমার! এই নিখাঁদ সম্বোধন, তার জীবন ঘটনাবহুল ও বিচিত্র। কিন্তু সকল ঝড়-ঝঞ্চ্ঝা, দুঃখ-দৈন্যের মধ্যেও তাঁর সদাজগ্রত প্রাণবাদী জাতির জীবনে যে শিহরণ জাগিয়েছে তা অবিস্মরণীয়, যা আজো অকেজো হয়ে পড়েনি। গভীর নিশিথে ভেসে আসার দূরাগত বংশীধ্বনির মতো তা আজও আমাদের মনকে অশান্ত করে তোলে।
যে গিরিমুখ থেকে একদিন অনলবর্ষী বক্তব্য নির্গত হয়েছিলো তা সত্যিই এক জ্বালাময় আগ্নেয়গিরি। শাসকরা-শোষকরা তার তাপ সইতে না পেরে বঙ্গবন্ধুকে বারবার সমাজকে দেশের স্বাধীনতার জন্যে সেদিন রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। যার পর্যায়ক্রমিক আবর্তনে আমরা পেয়েছি- বাহান্নর ভাসা আন্দোলন এবং এর বন্ধুর পথ বেয়ে পরিণতি লাভ করেছে স্বাধীনতার সশস্ত্র সংগ্রাম- ফলশ্রুতিতে স্বাধীন বাংলাদেশ।