ফ্ল্যাপে লিখা কথা
পাকিস্তান আমলে (১৯৪৭-৭১) সাবেক পূর্বপাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশে মিশ্র অর্থনীতির নামে যে অবাধ পুঁজিবাদের চর্চা হয় তার পরিণতি ছিল উৎকট। বৈষম্য-মানুষে-মানুষে, অঞ্চলে-অঞ্চলে এবং গোষ্ঠিতে-গোষ্ঠিতে। মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে সমাজতন্ত্র অন্যতম আদর্শ হিসেবে গৃহীত হয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর বাংলাদেশ ধীরে ধীরে বাজার অর্থনীতির লীলাভূমি হয়। এরপর কেটে গেছে ৩৭ বছর । বাজার অর্থনীতি আজ পল্লবিত ও পূর্ণ বিকশিত। বলা যায় উগ্র ও আগ্রাসী বাজার অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ। এর ফল কী? দেশে প্রবৃদ্ধি ঘটছে, কিন্তু এর ফল কে পাচ্ছে, এই আজ প্রশ্ন। লেখক তাঁর গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ের নিবন্ধগুলোতে বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন কীভাবে বাজার সমৃদ্ধ বাংলাদেশের সম্ভাবনাকে বৈষম্যের মাধ্যমে মেঘাচ্ছন্ন করছে। গ্রন্থটি বস্তুত ২০১১ সালে লেখক কর্তৃক রচিত নিবন্ধসমূহের সংকলন। এতে যে বিষয়গুলো স্থান পেয়েছে সেগুলো হচ্ছে : বাজার অর্থনীতি, সাধারণ অর্থনীতি/বাজেট,কৃষি/খাদ্য/বাজার/ব্যাংক/বীমা, সঞ্চয়/কালো টাকা, শেয়ার বাজার, আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য/সম্পর্ক এবং সমাজ/মানুষ/অর্থনীতি। এই আটটি বিষয়ের ওপর মোট নিবন্ধ রয়েছে ১২০ টি। প্রত্যেকটি নিবন্ধে লেখক দেখিয়েছেন আগ্রাসী বাজার অর্থনীতি কীভাবে ধনবৈষম্য, আর্থিক বৈষম্য ও আঞ্চলিক বৈষম্য সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশ আজ দুইভাগে বিভক্ত : ধনীর বাংলাদেশ ও গরীবের বাংলাদেশ। একশ্রেণীর লোক বাংলাদেশকে ‘প্রাইমারি এ্যাকুমেলেশন অব ক্যাপিটেলের অর্থ্যাৎ লুটের দেশে পরিণত করেছে। লেখক সাবধান করে বারবার বলেছেন এই পথ বাজার অর্থনীতির পথ নয়। গুণ,মেধা ও প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বাজারকে কাজে লাগিয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। লেখক বারবার বলেছেন টাকা বানানোর পথ এখন বাজার অর্থনীতি নয়, প্রতিযোগিতা নয়, বরং রাষ্ট্রের আনুকূল্য। এটি যত তাড়াতাড়ি বর্জিত হয় ততই মঙ্গল। গ্রন্থটি অত্যন্ত সহজ ভাষায় লিখিত । আশা করা যায় বইটি পাঠকপ্রিয় হবে।