ফ্ল্যাপ
নিষিদ্ধ প্রেম সম্পূর্ণ কাল্পনিক উপন্যাস হলেও এতে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের এক কঠোর বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। সে সময় দেশে ছিল অন্ন বস্ত্রের হাহাকার। প্রত্যেকের প্রত্যাশা ছিল আকাশছোঁয়া। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র তাহের তার ব্যতিক্রম ছিল না। বয়সে তাহের ছিল তরুণ। সবেমাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছে। ঠিক তখন সে একটি গোপন দলে প্রবেশ করে। অনেকের মতো তাহেরও স্বপ্ন দেখতো এদেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে। সমাজে শোষণ বঞ্চনা থাকবে না। ধনী দরিদ্রের ব্যবধানও থাকবে না। প্রত্যেকে তার সামর্থ্য অনুযায়ী পরিশ্রম করবে। বিনিময়ে রাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সবকিছু পাবে। তাহেরের মনে হতো সে যেন হাতে স্বর্গ পেয়েছে। দলের প্রতি তার আকর্ষণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। তার গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। গোপন সভায় তার ডাক পড়ে। অধ্যয়নের জন্য তাকে চেয়ারম্যান মাও সে তুংয়ের লাল বই দেয়া হয়। ‘লাল বই’ শুনে তার মনে হয়েছিল লাল রংয়ের কোনো বই। সমাজতন্ত্র সম্পর্কে তার কিছুটা ধারণা হয়। সে নামাজ পড়তো। আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাস করতো। উর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মেলামেশা করার সুযোগে সে জানতে পারে ধর্ম বিশ্বাস হলো কুসংস্কার। প্রেম-ভালোবাসা হলো পেটি-বুর্জোয়া ভাবধারা। দলে প্রেম ভালোবাসা নিষিদ্ধ। মানুষও একটি জড় পদার্থ। শুরু হয় তাহেরের চিন্তা জগতে ঝড়। দলের আদর্শ সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ কিংবা গোপন তথ্য ফাঁস করার পরিণাম ছিল নিশ্চিত মৃত্যু। তাহের জীবনকে ভালোবাসতো। রিনি নামে একটি মেয়েকেও ভালোবাসতো। সমাজতন্ত্রকে সে ঘৃণা করতে শুরু করে। তবে কারো কাছে সে প্রকাশ করতো না। রাসেল ছিল তাহেরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। উভয়ের চিন্তা ছিল ভিন্ন। প্রভাবশালী লোকের সন্তান রাসেলের কাছে সমাজতন্ত্র ছিল জীবনের শ্রেষ্ঠতম আদর্শ। দলে তার উন্নতি হতে থাকে। ভুল বুঝিয়ে সে রিনিকে দলে ভেড়ায়। এতে তাহেরের উদ্বেগ বৃদ্ধি পায়। সে ভেবে দেখতে পেলো চালে ভুল হয়ে গেলে সে চিরদিনের জন্য রিনিকে হারাবে। কৌশলে সে রিনির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। একটির পর একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনার ঢেউয়ে তাহের ও রিনি ভাসতে থাকে। জাল দলিল করে রাসেল রিনিদের জমি দখল এবং তাকে বিয়ে করার আয়োজন করে। রিনি একটি চিরকুট পাঠিয়ে তাহেরকে ঘটনা অবহিত করে। দেবদূতের মতো তাহের হাজির হয়। তার হাতে অস্ত্র। রাসেলও সশস্ত্র। একে অন্যের গুলিতে উভয়ে ঝাঝরা হয়ে যায়। রিনিও গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ রিনি ও তাহের একে অন্যের প্রতি রক্তাক্ত হাত বাড়িয়ে দেয়। দু‘জনের দু’টি হাতের মিলনের মধ্য দিয়ে তাদের জীবন প্রদীপ নিভে আসে।
লেখক পরিচিতি
সাহাদত হোসেন খান ১৯৫৬ সালের পহেলা মে নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার কাটাবাড়িয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং নরসিংদী কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে প্রথম হয়ে স্নাতক শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে দ্বিতীয় বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। আন্তর্জাতিক বিষয়ের উপর তার আগ্রহ সহজাত। সেই আগ্রহ থেকে তিনি আন্তর্জাতিক ও ঐতিহাসিক বিষয়ে নিয়ে বহু বই লিখেছেন। সাংবাদিকতা তাকে এ বিষয়ে যথেষ্ট সহায়তা করেছে। তিনি একজন পেশাদার সাংবাদিক। ১৯৮৭ সালে তাঁর সাংবাদিকতায় প্রবেশ। দৈনিক দিনকাল, দৈনিক ইনকিলাব, দৈনিক ইত্তেফাকসহ বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে সাংবাদিকতা করেছেন। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাব ও বাংলা একাডেমির সদস্য। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নে তিনি চার বার বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন।