“উৎসারিত আলো” বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা:
তােয়া, দুখন, মাংরা, বুধনি, সুখী। ওরা আদিবাসী৷ ছােটনাগপুরের এক রুখুসুখু গ্রামে ওদের বসতি। সে গ্রাম জলবিহীন, নদী নেই। বৃষ্টি হয় খুব সামান্য। মাটিও তেমন উর্বর নয়। এতােয়াদের জীবন চলে অতি কষ্টে, ভয়ংকর দারিদ্রে। এক গ্রীষ্মের দাবদাহে স্থানীয় মহাজন লালমােহন তেলি তাদের স্বপ্ন দেখাল এক সােনার দেশের যেখানে জল আর খাবার অফুরন্ত। দয়ালু ইংরেজ রাজা তাদের সেখানে নিয়ে যেতে চায়। একটু ভালভাবে বেঁচে থাকার আশায় যেতে রাজি হল সেই গ্রামের মানুষ। আসলে জোয়ান নারীপুরুষ তাদের শিশুদের সঙ্গে নিয়ে ওয়াগন ভর্তি হয়ে চালান হয়ে গেল ডুয়ার্সে। চা বাগানের কুলির কাজে। সেখানে ধর্মান্তরিত হয়ে বুধনিরা হয়ে গেল যিশুবাবার সেবক। গাঁওবুডাের বউ সুখীর নাম হয়ে গেল সুসান। প্ল্যান্টার হেগসাহেবের রক্ষিতা হতে হল তাকে। বাঘ, সাপ আর চাবুকের সামনে দুখনদের ক্রীতদাসের জীবন। সেখানে পদে পদে অসুখ, মৃত্যু আর তারই মধ্যে বেঁচে থাকার স্বপ্ন। এরই মধ্যে একটি অবৈধ সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেল সুখী। শ্বেতাঙ্গ এই সন্তানটির পিতা কে? চা বাগানের চার্চের ফাদার পিতৃপরিচয়হীন এই শিশুটির মধ্যে আবিষ্কার করলেন মানবাত্মা যিশুকে। কিন্তু অন্য চা-মজুরদের জীবন? তা কি স্তব্ধ হয়ে গেল? চায়ের পাতার শিরায় শিরায় তারা পেল কোন জীবনের ঠিকানা?