“কালবেলা” ফ্ল্যাপে লেখা কথা অনিশেষ যখন প্রথম কোলকাতায় পা রেখেছিল তখন রাস্তায় ট্রাম জ্বলছে, গুলি চলছে। উত্তরবঙ্গ থেকে আসা এই তরুণটি সেদিন দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল। তারপর আর পাঁচটা মানুষের মত গা ভাসিয়ে ভেসে যেতে যেতে হঠাৎ তার জীবনের মোড় পাল্টালো। ছাত্র রাজনীতি তাকে নিয়ে গেল জটিল আবর্তে। এই দেশে আর দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর দুর্বার বাসনায় বিভক্ত কম্যুনিস্ট পার্টির পতাকার নিচে গিয়ে দাঁড়াল । কিন্তু মনুষ্যত্ব এবং মানবিক মূল্যবাধ তাকে সরিয়ে নিয়ে এল উগ্র রাজনীতিতে। সত্তরের সেই আগুনের ঝাঁপ দিয়ে নিজেকে দপ্ধ করে সে দেখল, দাহ্যবস্তুর কোন সৃষ্টিশীল ক্ষমতা নেই। পুলিশের নির্মম অত্যাচারে সে যখন বিকলাঙ্গ তখন বিপ্লবের শরিকরা হয় নিঃশেষ নয় গুছিয়ে নিয়েছে আখের।
অনিমেষ অবাক হয়ে দেখল মাধবীলতাকে। মাধবীলতা কোন রাজনীতি করেনি কখনো, শুধু তাকে ভালবাসে আলোকেস্তম্ভের মত একা মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। খরতপ্ত মধ্যাহ্নে যে এক গ্লাস শীতল জলের চেয়ে বেশি কিছু হতে চায় না। বাংলাদেশের এই মেয়ে যে কিনা শুধু ধুপের মত নিজেকে পোড়ায় আগামীকালকে সুন্দর করতে। দেশ গড়ার জন্যে বিপ্লবের নিষ্ফল হতাশায় ডুবে যেতে যেতে অনিমেষ আাবিষ্কার করেছিল বিপ্লবের আর এক নাম মাধবীলতা। ‘দেশ’ পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রকাশের সময় এই দুটি চরিত্র লক্ষ পাঠকের ভালবাসা পেয়েছিল। সুস্থ উপন্যাসের সেইখানেই সার্থকতা।