“কাব্যে ঈশপের গল্প” বইটির ‘প্রসঙ্গকথা’ থেকে নেয়াঃ
ঈশপের জন্মস্থান ছিল গ্রিস। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৬২০ থেকে ৫৬০ পর্যন্ত তিনি জীবিত ছিলেন। অবশ্য তার ঐতিহাসিক অস্তিত্ব নিয়েও অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। প্রাচীন দার্শনিক প্লেটো, এরিস্টটল এবং অন্যদের রচনায় তাঁর নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রথমজীবনে তিনি ছিলেন ক্রীতদাস। বিশ্রীরকম চেহারা ছিল তাঁর। পশুপাখির ভাষা তিনি নাকি বুঝতে পারতেন অনায়াসে। তাই তাঁর গল্পে পশুপাখিরা মানুষের মতাে কথা বলেছে।
ঈশপ ছিলেন খুব বুদ্ধিমান। বুদ্ধিমত্তার কারণে তার মনিব তাঁকে মুক্তি দেন। কৌতুকপ্রদ ও জ্ঞানগর্ভ গল্প-বলিয়ে হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। লিডিয়ার রাজদরবারে তিনি আমন্ত্রিত হন। রাজা অ্যাপোেলাে দেবতাকে খুশি করার জন্য ঈশপকে অ্যাপােলাে দেবতার মন্দিরে প্রেরণ করেন। কিন্তু ঈশপ অ্যাপােলাে দেবতাকে খুশি করতে ব্যর্থ হন এবং ডেফি পর্বতচূড়া থেকে পড়ে গিয়ে নিহত হন।
ঈশপ লেখাপড়া জানতেন না। গল্প তিনি মুখে মুখে বলে গেছেন। ঈশপের মৃত্যুর দুশাে বছর পর একজন এথেন্সবাসী সর্বপ্রথম গল্পগুলাে লিপিবদ্ধ করেন। ধীরে ধীরে তার গল্প ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন দেশে। অবশ্য বিভিন্ন দেশে সেইসব দেশের পরিবেশে গল্পগুলাের রূপান্তর ঘটেছে। এভাবে ঈশপের গল্প হয়ে উঠেছে। চিরায়ত বিশ্ব-লােকঐতিহ্যের অনন্য প্রতীক।
বাংলাভাষায় ঈশপের গল্পের একাধিক সংকলন রয়েছে। বর্তমান সংকলনে আটটি গল্প কবিতায় রূপান্তর করে শিশুকিশােরদের জন্য সহজবােধ্য রূপ দেয়া হয়েছে। হালকা ও মিষ্টি ছন্দের এ গল্পগুলাে বয়স-নির্বিশেষে সবার জন্য হয়ে উঠেছে আনন্দদায়ক এবং শিক্ষণীয়। ইতােপূর্বে বাংলাদেশের খ্যাতনামা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি প্রেস লি, বইটি প্রকাশ করেছিল। এ বছর বইটি প্রকাশ করছে সর্বমহলে সমাদৃত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। এজন্য বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সুযােগ্য সভাপতি, ‘আলােকিত মানুষ চাই’ আন্দোলনের পুরােধা সর্বজনপ্রিয় অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে ধন্যবাদ। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে কর্মরত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সমন্বয়কারী (উন্নয়ন) স্নেহভাজন পীযূষকান্তি সাহা এবং প্রকাশনা বিভাগের হুমায়ুন কবিরকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা।
মুহম্মদ শামসুর রহমান।
১৫ নভেম্বর ২০০৬
২১৫/৪, পূর্ব রামপুরা, ঢাকা।