“রবীন্দ্রকাব্যদর্শন” বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা:
রবীন্দ্রকাব্যদর্শন বিষয়ে কিছু গ্রন্থ রচিত হলেও রবীন্দ্রকাব্যগ্রন্থের ক্রমপরিণতিমূলকতার সাথে সম্পর্কিত করে রবীন্দ্রকাব্যদর্শনকে স্পষ্টায়িত করার কোন সামগ্রিক প্রয়াস বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে সম্ভাবিত হয়নি বলেই ড. রহমান হাবিব রবীন্দ্রকাব্যদর্শন গ্রন্থরচনায় প্রণােদিত হয়েছেন। ভারতীয় দর্শন শুধু জ্ঞানার্জনের জন্য জ্ঞানে বিশ্বাসী নয়; বরং ভববন্ধন হতে মুক্তি বা নির্বাণ ও নিস্কৃতির জন্য তারা মােক্ষমুখী। জ্ঞানসাধনার পরিচর্যা করে এসেছে। পাশ্চাত্য বস্তুবাদী (Materialistic) দর্শনের সঙ্গে ভারতীয় ভাববাদী (Idealistic) দর্শনের মৌল পার্থক্যকে এভাবে সমীকৃত করা যায় । উপনিষদের ব্রহ্মবাদ প্রকৃত অর্থে সর্বেশ্বরবাদেরই (Pantheism) নামান্তর বলে রবীন্দ্রনাথের জ্ঞান-প্রেম-ভক্তি-কর্ম এবং মুক্তির আনন্দবাদী। জীবনার্থ সন্ধানী দার্শনিক দৃষ্টি সমগ্র পাশ্চাত্য দর্শনের বিপরীতে ভাববাদী ভারতীয় দর্শনের ঋত্বিক (Pionee) হিসেবে তাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। জীবনাচরণের সামগ্রিক রূপাবয়বকে রবীন্দ্রনাথ কিভাবে চিরকালীনতায় উপস্থাপন করেছেন, সেই কাব্যদর্শন তাৎপর্যসহ। রবীন্দ্রনাথের দেশাত্মবােধ, লােকচেতনাবােধ, প্রেমবােধ, বিশ্বাত্মবােধ ও নান্দনিক-বােধের পরিচর্যাসমেত জীবনদেবতাভাষ্যের সর্বেশ্বরবাদী চৈতন্যের বিস্তারসম্পৃক্ত বস্তুবিশ্ব ও আত্মবিশ্বের অনুভববাদী সমীকৃতিতে কবির স্রষ্টা ও সৃষ্টি। সম্পর্কের অনপনেয় অপরিসীমতা কিভাবে তাঁর কাব্য-তাৎপর্যে ধৃত হয়েছে-রবীন্দ্রকাব্যদর্শনের সে বিশ্লেষণ, ব্যাখ্যা ও মূল্যায়নই এই গ্রন্থে অন্বিষ্ট হয়েছে। বস্তুবাদ ও ভাববাদের সমীকৃত নান্দনিকতায় ভারতাত্মার মর্মরূপ কিভাবে ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথের সর্বগ্রাসী কাব্যপর্যবেক্ষণ বেষ্টনীতে আবিষ্ট হয়েছে, রবীন্দ্র জ্ঞান, প্রেম ও কর্মানন্দবাদী মুক্তির ব্যাপক-গভীর জীবনার্থবােধ রবীন্দ্রকাব্যদর্শনগ্রন্থে অন্তর্দৃষ্টির অভিক্ষেপে এবং দুরায়ত ভাবনার চিরায়তবােধের প্রাতিস্বিকতায় নিরীক্ষিত হয়েছে।