মাহবুব কবির-এর প্রথম কাব্যগ্রন্থ কৈ ও মেঘের কবিতা যে ঘোর কুহকের ঘূর্ণিপাকে লীন হয়ে ঘুরতে ঘুরতে হয়ে উঠেছিল অন্যকিছু হাওর, জলপোকা, দুধরাজ সাপ, শ্মশান, কৈ, ছুরি, নৌকা, গোঁসাইয়ের আখড়া, শেয়াল…, সেই বহুরূপী ছদ্মাবরণ থেকে সম্প্রসারিত হয়ে তাঁর কবিসত্তা এ গ্রন্থে এত ভূজ, উপত্যকা, ছায়াঘেরা, জলজ সহজিয়া সম্মোহন বিস্তার ক’রে আমাদের সামনে উপস্থিত হয় যে, তখন প্রতিটি কবিতার অন্তঃস্থলে বাহিত হয় ঠাণ্ডা ও চকচকে সুপেয় জলের মতো শ্রেয়বোধ; আর দেহজুড়ে কণ্টকিত হয়ে ওঠে যাপিত জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতারাশি যা তাঁর অসমাপ্ত লড়াইয়ের চলমান উপাখ্যান কিংবা শতখণ্ডে চুরচুর হয়ে পড়া ঘটনারাশির নানামুখী ইশারা-অভিজ্ঞান। সাধারণ কিন্তু অন্তর্দৃষ্টির ছোঁয়ায় অসাধারণ হয়ে ওঠে তাঁর বিষাদ, আতঙ্ক, উদ্বেগ আর যার সাথে দ্বন্দ্বে মাতোয়ারা থাকে তাঁর অপরাজেয় মনোভঙ্গি, মুহূর্তের স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দ, পৃথিবীকে সবুজ রাখার তীব্র আকাক্সক্ষা। চারিদিকে যখন লিঙ্গ, জাতপাত, সম্প্রদায় ও সম্পদগত যাবতীয় অসমতা, মাহবুব কবির তখন নীলপ্রজাপতি, তিতপুটি, ঘোড়াঘাস, ব্রোথেল, কুপিবাতি, শ্রীচৈতন্য, নিমগাছ, লাঙলের ফলা, ব্রহ্মপুত্র, মদন সরকার… এর মধ্যে ঢুকিয়ে দেন সবার জন্য একমাত্র ও অবিভাজ্য আত্মপরিচয় মানুষ। মনে হয় তখন প্রতিটি পৃষ্ঠায় অজস্র ফুল হাসছে, কাঁদছে। আর ঠিকরে বেরুচ্ছে প্রকৃতির মনীষা, হাওয়া তা ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিচ্ছে দিকে দিকে রুক্ষ, বিবর্ণ পৃথিবী ক্রমশ সবুজ হয়ে উঠছে। আসুন, অবগাহন করি সবুজে।