ভূমিকা
ধাঁধা কী? বাংলা অভিধানে শব্দটির অর্থ এমনভাবে লিখিত আছে : দৃষ্টি বিভ্রম। দিশেহারা অবস্থা, সংশয়, ধোঁয়া, জটিল সমস্যা, কৌতূহল সৃষ্টিকারী বিষয়। বিভ্রান্তিকর অথচ বুদ্ধিদীপ্ত। শব্দগুলির প্রতিটি খাঁটি। ধাঁধার উপস্থিতি জনজীবনে দীর্ঘকাল যাবত ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে। ধাঁধা সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে এজন্যে আকর্ষনীয় যে তা সমবয়সী বা সকল বয়সী মানুষকে তাৎক্ষণিকভাবে একাধারে কৌতুক সৃষ্টি, আনন্দদান এবং চমক সৃষ্টি করতে পারে। পৃথিবীতে প্রথম ধাঁধাটি কোথায় কে বা কারা রচনা করেছিলেন হয়ত আজ তার হদিস পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা একথা জোর গলায় বলতে পারি, কালিদাসের যুগেও এদেশে ধাঁধার বর্ণাঢ্যময় উপস্থিতি ছিল। ধাঁধা নিয়ে নানান ধরনের মজাদার অভিজ্ঞতার স্বাক্ষী এদেশের মানুষ। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় আজও বরযাত্রীকে আবাহনের সময় ধাঁধার প্রতিযোগিতা হতে দেখা যায়। দুনিয়ার সকল বিষয় নিয়ে ধাঁধা আছে। গণিত, সাহিত্য, শিল্পকলা, সঙ্গীত, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড, প্রাকৃতিক ঘটনাবলী ছাড়াও জীবজন্তু ফলফুল নিয়েও মজাদার ধাঁধা বাংলার জনজীবনে ছড়িয়ে আছে।
বাংলা গ্রামীণ জীবন তখনো দাদী বা নানার কাছাকাছি শুয়ে বসে ধাঁধার বৈঠক আমাদের সকলেরই ছোটবেলার এক মজার স্মৃতি। আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের কারণে ও অগ্রাম্য নগরায়ণের ফলে গ্রামীণ সমাজের ঐ চিরন্তন বাঙালি সমাজ আজ যদিও হামলার মুখে তবু আমরা নিশ্চিত কোনোভাবেই বাঙালিয়ানাকে এদেশ থেকে মুছে ফেলা যাবে না।
এক্ষেত্রে প্রত্যেকটি প্রকৃত বাঙালির কিছু দায়িত্ব থাকে, সে দায়িত্ব দেশের জনগণের শতাব্দী-শতাব্দীকালীন ঐতিহ্যকে ধারণ ও লাল করা। সেই তাগিদের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের এই ছোট্ট প্রকাশনা। পুস্তকটি পাঠে আজকের প্রজন্ম যদি কখনো তাদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করে উদ্বুদ্ধ ও আল্পুত হন তবেই আমার শ্রম সার্থক মনে করব।
আবুল বাশার
ঢাকা
১ আষাঢ় ১৪১৩