“তিতাস একটি নদীর নাম” বইটির প্রথম অংশ থেকে নেয়াঃ
অদ্বৈত মল্লবর্মণের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকীর্তি ‘তিতাস একটি নদীর নাম।’ উপন্যাসটি ১৩৫২ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ সংখ্যা থেকে ধারাবাহিকভাবে মাসিক মােহাম্মদী’ পত্রিকয় প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু উপন্যাসটি সম্পূর্ণ প্রকাশিত হওয়ার পূর্বে লেখক মােহাম্মদী পত্রিকার চাকরি আদর্শিক মতবিরােধের কারণে ছেড়ে দিলে উপন্যাস প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়। যতদূর জানা যায় শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন সংখ্যার পর তিতাস একটি নদীর নাম প্রকাশিত হয়নি এবং এর পাণ্ডুলিপিটি হারিয়ে যায়। লেখক এরপর উপন্যাসটি পুনশ্চ লেখেন। এই পুনর্লিখিত পাণ্ডুলিপিটি গ্রন্থাকারে পুথিঘর থেকে প্রকাশিত হয় ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে। গ্রন্থ ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ এর সাথে মােহাম্মদী’ পত্রিকায় প্রকাশিত ধারাবহিক উপন্যাসের বেশ পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। অর্থাৎ আদি পাঠ ও গ্রন্থভূত পাঠের পার্থক্য সুস্পষ্ট। মােহাম্মদীতে প্রাপ্ত পাঠের মধ্যে যে ছােট গল্পিক ব্যঞ্জনা প্রত্যক্ষ করা যায়, তার অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় গ্রন্থভূত পাঠে। গ্রন্থে এসে গল্পটি হয়ে উঠেছে বিস্তৃত জীবনের শিল্পরূপ। যার নাম উপন্যাস।
গ্রন্থাকারে প্রাপ্ত ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাসে আছে চারটি খণ্ড। আর প্রতিটি খণ্ডে আছে দুটি পর্ব। প্রথম খণ্ডের পর্বদ্বয় হলাে—তিতাস একটি নদীর নাম ও প্রবাস খণ্ড, দ্বিতীয় খণ্ডের পর্বদ্বয় হলাে—নয়াবসত ও জন্ম-মৃত্যু-বিবাহ। তৃতীয় খণ্ডে আছে রামধনু ও রাঙা নাও এবং চতুর্থ খণ্ডে আছে দুরঙা প্রজাপতি ও ভাসমান পর্ব।
অদ্বৈত মল্লবর্মণ উপন্যাসটির সূচনা করেছেন বাস্তবতার সত্য কথনের মাধ্যমে অর্থাৎ নির্মোহভাবে তবে কাব্যিক ঢঙে। এই কাব্যিক বর্ণনার মাধ্যমে উপন্যাসটির স্বাতন্ত্র ফুটে উঠেছে। লেখকের প্রারম্ভিক বক্তব্যের মধ্যদিয়ে একথাই পরিস্ফুট হয় যে, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাসের কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়ে আছে নদী তিতাস, অন্য কোনাে নারী-পুরুষ কিংবা ঘটনা নয়।