“১৯৭৫ সাল” বইটির সম্পর্কে কিছু কথা:
১৯৭৫ সাল আমাদের দেশের জন্য একটি সংকটের কাল বলা যেতে পারে। এ বছরে আমার জীবনেও অনেক পরিবর্তন এসেছিল। কয়েক বার বিদেশে গিয়েছিলাম এবং বিদেশীদের অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। সব ক্ষেত্রেই আমি একটি উত্তর দিয়েছিলাম তাহলে যা কিছুই ঘটুক না কেন আমাদের দেশ তো বেঁচে আছে এবং এদেশকে আমরা বাঁচিয়ে রাখব। যা ঘটেছে তা পুনরুদ্ধার করা সম্ভবপর নয়। আমাদের কর্তব্য হবে সংশয় ও দ্বিধা থেকে মুক্ত হয়ে সর্বপ্রকার গ্লানি অতিক্রম করে দেশকে একটি প্রশান্ত মূর্তিতে উজ্জ্বল রাখা। ১৯৭৫ সালে আমি প্রতিদিন রোজ নামচা লিখতাম। এই রোজনামচা সেদিনের সব কটি দিনের চিন্তাভাবনা এবং আশ্বাসের প্রতিবিম্ব ফুটে উঠেছে। সেজন্য ইতিহাসের দিক থেকে এ বইটি মূল্যবান। আমার দৃষ্টিতে কোন কিছুই আড়াল থাকেনি। আমি নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গিতে সবকিছু দেখবার চেষ্টা করেছিলাম। আমার কাছে আমার ক্ষুদ্র পৃথিবী সব সময় আমার সামনে জেগে উঠতো। আমি ভাবতাম পৃথিবী এবং আমি একটি সমস্যার মধ্যে যেন আবর্তিত। বিক্ষুব্ধ কখনও হইনি কিন্তু হয়তো হতাশা কখনও জেগেছে।
আমার বন্ধু ছিলেন বিখ্যাত হিন্দী কবি বাৎসয়িন। তার সঙ্গে আমার অনেক বিষয়ে মিল ছিল। তিনি সমুদ্র দেখতে ভালবাসতেন এবং পাহাড়ের কাছে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করতেন। আমিও সমুদ্র তীরে দাঁড়িয়ে অনন্তের গতিধারা লক্ষ্য করতাম। তিনি আমাকে বলেছিলেন, মানব জীবনে সবকিছু মসৃণভাবে ঘটে না। জীবনে শঙ্কা থাকে, আবার বাঁচবার ইচ্ছাও থাকে। আমাদের উচিৎ শঙ্কা-বিমুক্ত হয়ে বেঁচে থাকার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করা। একজন লেখকের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন বেচে থাকার জন্য শব্দ সংগ্রহ করা। কেননা শব্দ হচ্ছে আমাদের অভিজ্ঞতার মাপকাঠি। অভিজ্ঞতা যেমনিই হোক না কেন তার গতি হচ্ছে সময়ের মধ্য দিয়ে এবং প্রতিটি প্রহর গণনার মধ্য দিয়ে।