‘পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি-১’ বইটিতে লেখা ফ্ল্যাপের কথাঃ একমাত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা বাদ দিলে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল ভাষা আন্দোলন একে বলা হয় আমাদের আত্মআবিস্কার বা স্বরূপ-অন্বেষার সূচনালগ্ন। অনেকের মতে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজ এই ভাষা আন্দোলনের মধ্যেই উপ্ত ছিল। ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব বা মহত্ব কেবল ১৯৫২ এর ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকায়। ছাত্রদের মিছিল-সংগ্রাম ও শহীদদের আত্মদানের ঘটনায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নটি নিয়ে তৎকালীন পূর্ব বাঙলার মানুষ কিংবা তার সচেতন অংশটির মধ্যে ১৯৪৮ কিংবা তারও আগে অর্থাৎ বিভাগপূর্বকালেই চিন্তাভাবনা শুরু হয় একথা যেমন সত্য,তেমনি বা তার চেয়েও বড় সত্য হল, এই আন্দোলনের তাৎপর্য ভাষা বা সাংস্কৃতিক স্বাধিকারের দাবি ছাড়িয়ে জাতীয় স্বাধীনতা ও মেহনতি মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির লড়াইয়ের মধ্যে তার পরিণতি খুজেছিল। আপাতদষ্টে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বা নাগরিক। সমাজের আন্দোলন বলে মনে হলেও ব্যাপক গণমানুষের ক্ষোভ-প্রতিবাদের জ্বালামুখ হিসেবে কাজ করেছিল সেদিন ভাষা আন্দোলনের ঘটনাটি। ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব বিচার কিংবা আমাদের জাতীয় জীবনে তার প্রভাবপ্রতিক্রিয়া বুঝতে হলে সুতরাং আন্দোলনের সামগ্রিক পটভূমি তথা সমকালীন রাজনৈতিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটেই তা করতে হবে। আর এই অতি প্রয়ােজনীয় কাজটিই বদরুদ্দীন উমর করেছেন তিন খণ্ডে সমাপ্ত এবং অজস্র সাক্ষাঙ্কার, দলিল সমৃদ্ধ তাঁর ‘পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি গ্রন্থে । আমাদের জানা মতে ভাষা আন্দোলনকে নিয়ে লেখা প্রথম গবেষণামূলক গ্রন্থ এটি। আর কোনো তর্ক বা প্রতিবাদের আশঙ্কা না করেই বোধহয় বলা যায়, অদ্যাবধি কি তথ্য সমাবেশের কি বিশ্লেষণী ক্ষমতার দিক থেকে এই গ্রন্থটিকে অতিক্রম করার যোগ্যতা আর কারো হয়নি। কোনো রকম প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া সম্পূর্ণ একক।