“গুড আর্থ” বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ
চীনের কিয়াঙ সু প্রদেশের নানকিঙ শহরে, একদা চতুর্দশ বছর আগে, এই বই আমি লিখি। কোলাহল থেকে দূরে শান্ত একটি ছােট্ট ঘর … আমার পড়বার ঘর … সেই ঘরে বসেই আমি লিখি। তার নিচু জানালা দিয়ে বাইরে, শহরের ছাদের পর ছাদ পেরিয়ে, নগর-প্রাচীর ছাড়িয়ে, সােজা দেখতে পেতাম সান-ইয়াৎ-সানের মর্মর সমাধি-স্মৃতি, রক্ত-পাথরের পাহাড়ের গায়ে ঝকমক করে উঠতাে তার প্রস্তর শুভ্রতা।
যে সব মানুষের কথা নিয়ে আমার এই কাহিনী রচিত, তারা কিন্তু সেই ধনী প্রদেশের বাসিন্দা নয়। দুর্ভিক্ষ বিতাড়িত হয়ে দক্ষিণ দিকে হাঁটতে হাঁটতে তারা এই নানকিঙ শহরে এসে পৌঁছত। তাদের বাড়িঘরদোর সব ছিল উত্তর অঞ্চলের আনহুই প্রদেশে … সেখানেও আমি বহুকাল বাস করেছি, তাদের মধ্যে থেকে তাদের জেনেছি চিনেছি। দুর্ভিক্ষ শেষ হয়ে গেলে, তারা আবার সেই উত্তর অঞ্চলে ফিরে যেতাে।
কিন্তু আজ সেই দক্ষিণী শহর, উত্তরাঞ্চল এবং চীনের সমস্ত পূর্ব উপকূল শত্রুরা (জাপানী ফ্যাসিস্টরা] দখল করে নিয়েছে। যে ঘরে বসে চরম নিশ্চিন্ত মনে নির্বিবাদে আমি লিখতাম, সে ঘর, সে বাড়ি আজ জাপানীরা অধিকার করে নিয়ে আছে। না জানি, কত না অনাত্মীয় দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে সে আছে! শত্রুর আক্রমণের জঘন্যতম ও নিষ্ঠুরতম অপঘাত নানকিঙ শহরকে সহ্য করতে হয়েছে। শত সহস্র নাগরিক লুণ্ঠিত, ধর্ষিত এবং নিহত হয়েছে। নবীন চীনের রাজধানী করে নানকিঙ শহরকে তারা যে-সব সুন্দর সৌধমালায় বিভূষিত করে, আজ সে-সব সুরম্য অট্টালিকায় বিচরণ করছে বিদেশী প্রভুর চরণাশ্রিত কলের পুতুলের শাসক আর তাঁর অনুচরেরা।