ভূমিকা
বাংলা বাজারের সৃজনশীল বইয়ের প্রকাশকরা এ দেশের একজন লেখককে তাঁদের জন্য কোরামিন হিসেবে বিবেচনা করেন ।তিনি হচ্ছেন হুমায়ুন আহমেদ। টেলিভিশনের যে কোনে প্রবীণ প্রযোজক হুমায়ুন আহমেদের একটি নাটক পেলে বর্তে যান, না পড়েই বলে দিতে পারেন-তাঁদের প্রান্তিক জরীপে এটি দর্শকদের পছন্দ তালিকার শীর্ষে থাকবে। তিনি এদেশের একমাত্র লেখক- প্র্রকাশকরা যার বাড়ি গিয়ে পান্ডুলিপি পাওয়ার আগে চোখ বুজে ব্ল্যাক চেক দিয়ে আসেন। অনেক প্রকাশক এই লেখকের কাছ থেকে সম্ভাব্য বইটির নাম নিয়ে শিল্পীকে দিয়ে প্রচ্ছদ আঁকিয়ে ছেপে বসে থাকেন তীর্থের কাকের মতো-কবে পাবেন পরম প্রত্যাশিত পান্ডুলিপিটি। যদি তারা আশা বাদিী হন যে পান্ডুলিপি পাবেন, বছরের পর বছর অপেক্ষা করেও ক্লান্তি বোধ করেন না।
হুমায়ুন আহমেদের এ অভাবনীয় জনপ্রিয়তা বাংলাদেশের ভৌগলিক গন্ডি অতিক্রম করে ছড়িয়ে পড়েছে পঞ্চিমপঙ্গ এবং ইংল্যান্ড আমেরিকার বাঙালী অধ্যুষিত শহরগুলোতে । লন্ডনের ব্রিকলেন কিংবা নিউয়র্কের ব্রুকলিন,এ্যাস্টোরিয়র বহু মনোহারি দোকানে দেখেছি হলুদ, মরিচের গুঁড়ো, উপটন, অথবা আবদুর রহমান বয়াতির গানের ক্যাসেটের পাশাপাশি শো’কেসে শোভা পাচ্ছে হুমায়ুনের রঙচঙে মলাটের সদ্য প্রকাশিত বই। স্বল্প শিক্ষিত বাঙালী দোকানী হুমায়ুন আহমেদ ছাড়া বাংলার সেইসব লেখকদের নামই শুধু জানেন যাদের লেখা স্কুলে পড়ানো হয়। প্রকাশকদের মতে পঞ্চিমবাংলায়ও শংকর ছাড়া হুমায়ুনের মতো জনপ্রিয় লেখক দ্বিতীয় কেউ নেই।
হুমায়ুনের এই বিস্ময়কর জনপ্রিয়তার কারণ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে সাহিত্যর সমালোচকরা কখনো একমত হতে পারেননি। বিষয়টি তারা আলোচনায় সযত্নে এড়িয়ে যান। অনেক সময় তাদের এতদসংক্রান্ত ঘরোয়া আলোচনা কৌতুকে পর্যবসিত হয়। তাঁর কোনো বইয়ের প্রকাশনা উৎসব হয়েছে -এ তথ্য আমাদের জানা নেই। প্রকাশিত বইয়ের দশভাগও পত্রপত্রিকায় আলোচিত হয়েছে কিনা সন্দেহ। আলোচনা যদিও কখনো হয়- দুই সমালোচক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে দুই বিপরীত মেরুতে অবস্থান করেন।
সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি অবশ্য হুমায়ুন আহমেদ তার প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ‘নন্দিত নরকে’ লিখেই পেয়েছিলেন। বাইশ বছরের এক অচেনা তরুন লেখকের এই লেখাটি পড়ে অভিভূত হয়েছিলেন ডঃআহমদ শরীফের মতো প্রবী ন প্রাজ্ঞ প্রাবন্ধিক ও সাহিত্যের অধ্যাপক। হুমায়ুনের লেখায় তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন একজন সূক্ষ্ণদর্শীর শিল্পীর , একজন কুশলী স্রষ্টা পাকা হাত। তিনি লিখেছিলেন , ‘জীবনের প্রাত্যহিকতার ও তুচ্ছতার মধ্যেই যে ভিন্নমূখী প্র্রকৃতি ও প্রবৃত্তির জটাজটিল জীবন কাব্য তার মাধুর্য, তার ঐশর্য, তার মহিমা, তার গ্লানি, তার দূর্বলতা, তার বঞ্চনা, বিড়ম্বনা ,তার শূন্যতার যন্ত্রণা ও আনন্দিত স্বপ্ন নিয়ে করেবরে ও বৈচিত্র্য স্ফীত হতে থাকে, এত াল্প বয়সেও লেখক তার চিন্তা চেতনায় তা ধারণ করতে পেরেছেন দেখে মুগ্ধ ও বিস্মিত।…….হুমায়ুন আহমেদ বয়সে তরুন,মনে প্রাচীন স্রষ্টা, মেজাজে জীবন- রসিক, স্বভাবে রুপদর্শী , যোগ্যতায় দক্ষ রুপকার । ………. ‘