ফ্ল্যাপে লিখা কথা
সকল কথা প্রাণ খলে বলতে পারার মতো এক আবেগ ঘন প্রকাশ ‘হলুদ বরণী’। গ্রন্থভুক্ত কবিতাগুলোর মধ্যে দিয়ে জসীম উদ্দীন মূলত রবীন্দ্র-নজরুলাসারী প্রেম ও সৌন্দর্য ভাবনার আপন বলয় তৈরি করতে চেয়েছেন। পল্লীনারীর রূপবর্ণনায় কবি লেখেন , হলুদ বাটিছে হলুদ বরণী মেয়ে/ হলুদের পাটা গড়ায় রাঙা অনুরাগে ছেয়ে’। তারপর মেয়ের গার্হস্থ্য জীবনটি তিনি ছত্রে ছত্রে গেঁথে তোলেন। অবকাশে মনের আয়নায় নিজ কামনার কণ্টকচিহৃও যেন খানিক পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। এ ধারার চিত্র অন্যান্য কবিতার বেলাতেও আমরা কম বেশি পাই। কোথাও কোথাও নারীর কৈশোর এবং যৌবন সন্ধিক্ষণের খেলায় কবির চিত্ত চাঞ্চল্যও পাশাপাশি ইন্দ্রিয়ঘন রহস্যও কবি এই রচনায় হঠাৎ হঠাৎ মিলিয়ে ফেলেন। প্রকৃতপক্ষে এগুলো নারীর রূপ-অবগাহনে জসীম উদ্দীনের কল্পনা ,আবেগ এবং তাবৎ অনুভূতির বিচিত্র মোচড়। সেই সুরেই তিনি এখানে যেন বার বার নব রাগে রঞ্জিত হয়েছেন।
অন্যদিকে ‘হলুদ বরণী’ রচয়িতার শিল্পসত্তাই এক ধারাবাহিক ইতিহাস। আর নির্মাণ বিচারে রচনাগুলোতে কবির সহজপটুত্বের ছাপটিও বিরাজমান। আশপাশ থেকে বনফুল কুড়িয়ে নেওয়ার মতো অসম্ভব সুন্দর সুন্দর সব উপমা ও রূপকল্পও তিনি গ্রহণ করেছেন। গ্রন্থটি মুখ্যত নারী-সৌন্দর্যের জয়যাত্রা হলেও প্রেম-ভাবনা যুক্ত হয়েছে প্রবল আবেগে। আর শিল্প সন্ধানের ক্ষেত্রে একটি ধারাবাহিকতা তাতে বরাবরই পরিলক্ষিত । পেছনে পেছনে লোক জীবনের বেশ দীর্ঘায়িদ চিত্রও স্থাপিত দেখতে পাই। এই মিলিত রূপ হলুদ বরণী’ কে পাঠক-পাঠিক সমীপে অনে আদরই দিয়ে থাকবে।