জগৎ থেকে লেখককে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। আমি জাগতিক কারণে প্রথম বই প্রকাশ করেছিলাম, এবং প্রকাশের পরেই সে জাগতিক প্রয়ােজনটি মিটে গিয়েছিলাে। কিন্তু জগৎ আমাকে ছাড়ে নি। বরং জগৎ আমার ওপর প্রতিশােধ নিয়েছে। সে তার নিজের প্রয়ােজনে এবং নিজস্ব উপায়ে এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, যে পরিস্থিতি আমাকে, আমার উল্লিখিত প্রয়ােজনটি মিটে যাবার পরেও, আমাকে লেখা অব্যাহত রাখতে বাধ্য করেছে। আমি এ বিষয়টিকে বিশেষভাবে গৌরবের মনে করি। কেননা, জগৎ সবাইকে এভাবে বাধ্য করে না।
কেউ কেউ শখ করে লেখেন। শখ ফুরিয়ে গেলে লেখা ছেড়ে দেন। কেউ কেউ অভ্যাসবশত লেখেন এবং নিজেকে পুনরাবৃত্ত করতে থাকেন। আমি যদি শখ মেটানাের জন্য লিখতাম তাহলে বহু আগেই লেখার কাজ ফুরিয়ে যেতাে। যদি অভ্যাসবশত লিখতাম, উপন্যাসের সন্ধানে পাহাড়ি এলাকার অপরূপ বিন্যাসে ছুটে যেতাম না। আমাদের জীবনে এবং আমার নিজের জীবনে যা কিছু ঘটছে আমি তা নিবিষ্টভাবে দেখার চেষ্টা করি এবং যা দেখি তাই আমার লেখায় মূর্ত করার চেষ্টা করি। আমার একটি বইয়ের নাম যাপিত জীবন আমার সব লেখার এই একই নাম হতে পারে। এই যে বই এরও নাম ‘উপন্যাস সমগ্র না হয়ে যাপিত জীবন’ হওয়াই অধিকতর যুক্তিসঙ্গত হতাে। পাঠক প্রশ্ন করতে পারেন জীবনের সবটুকু কোনাে লেখকের পক্ষে নিজে যাপন করা তাে সম্ভব নয়; আমার পক্ষেও সম্ভব নয়, তাহলে আমার সব লেখার নাম যাপিত জীবন’ হবে কেন?যদি যাপিত জীবন বলতেই হয়, তাহলে তার আগে আমার কিংবা নিজের’ শব্দটি ব্যবহার করবাে।