“ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট” বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ
ফিওদর দস্তয়ভস্কি-রুশ সাহিত্যের এক মহারথি। আজকের দিনে বিশ্বসাহিত্যে উপন্যাসের এক পুরােধা ব্যক্তিত্ব। সাহিত্যের আঙিনায় যেন এক বিশাল মহিরুহ। উপরােক্ত বিশেষগুলাে যার নামে সারা বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত সেই ফিওদর দস্তয়ভস্কি জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৮২১ সালের ৩০ অক্টোবর। বাবার নাম মিখাইল আয়েচিভ বদস্তয়ভস্কি। পেশা হিসেবে তিনি ছিলেন তৎকালীন রাশিয়ার মস্কোর এক হাসপাতালের ডাক্তার। অত্যন্ত বদমেজাজী স্বভাবের লােক ছিলেন মিখাইল দস্তয়ভস্কি। বেশির ভাগ সময় তাঁর এই মেজারের বহিঃপ্রকাশ ঘটতাে নিজের স্ত্রীর ওপর অত্যাচার করে। সেই শৈশবকাল থেকে নিজের মায়ের ওপর বাবার পাশবিক অত্যাচার মুখ বুজে দেখতেন ফিওদর দস্তয়ভস্কি আর তার অন্যান্য ভাইবােন। সেই সাথে বাবার এই নৃশংস অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করতেন ফিওদরের মা। স্বভাবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত নরম আর কোমল। গভীর ভালােবাসায় আচ্ছন্ন ছিল তার হৃদয়। স্বামীর কাছ থেকে যতটা লাঞ্ছনা আর যন্ত্রণা তিনি পেতেন– তার চেয়ে অনেক বেশি স্নেহ আর ভালােবাসা উজাড় করে দিতেন ছেলে-মেয়েদের। অথচ ফিওদরের বাবা তাঁরই ঔরসজাত সন্তানদের প্রতি ছিলেন উদাসিন মনােভাবের। স্বভাবে তার প্রকাশ পেত নিষ্ঠুরতা আর লাম্পট্য। অর্থাৎ মা এবং বাবার মধ্যে ছিল পরস্পর সম্পূর্ণ উল্টো মানসিকতা। সমালােচকরা বলেন, ফিওদরের মা আর বাবার মধ্যকার এই পরস্পরবিরােধী মানসিকতা প্রবলভাবে প্রভাব বিস্তা করেছিলাে ফিওদরকে সেই শৈশবকাল থেকে। সেইসময়ে রাশিয়ায় চলছিল ভাঙ্গাগড়ার খেলা। চারদিকে শুধু হতাশা আর দুঃখের ব্যাপকতা। কষ্টের তাণ্ডবতা। আর সব কোটি কোটি রুশ পরিবারের সদস্যদের মতাে তাদের পরিবারও কষ্ট আর দুঃখ থেকে রেহাই পাননি। তার ওপর সাত সাতটি ভাই-বােন ছিলেন তাঁরা। তাদের কষ্ট চরমে উঠলাে যখন মা মারা গেলেন। আর ঠিক তখনই যেন তার দুরন্ত লম্পট স্বভাবের বাবা আরও বদলে গেলেন। এবার তার নিশানা যেন ছেলেমেয়েরা।