“অটোবায়োগ্রাফী অব মহাত্মা গান্ধী” বইটির ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ
মহাত্মা গান্ধী লিখিত “An Autobiography or the story of my Experiments with truth’ জীবনীগ্রন্থ ১৯২৭ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। প্রকৃতপক্ষে এটি সর্বপ্রথম নবজীবন’-এ এবং মহাদেব দেশাইকৃত ইংরেজি অনুবাদ ‘ইয়ং ইন্ডিয়াতে’ প্রকাশিত হয়েছিল। বাংলাদেশ এমন একটি গ্রন্থের প্রয়ােজন দীর্ঘদিন ধরে অনুভব করে আসছে। সে তাগিদেই বই প্রকাশের জন্য অনুবাদ কাজে হাত দেয়া হয়। পাঠকের বােঝার জন্য বইটির নাম ‘অটোবায়ােগ্রাফী অব মহাত্মা গান্ধী’ রাখা হয়েছে।
কট্টর হিন্দু জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী মােহন দাস করমচাঁদ গান্ধী অবিভক্ত ভারতবর্ষে প্রতিটি আন্দোলনে তার ভূমিকা অনস্বিকার্য। প্রথম জীবনে নাস্তিকতা থকলেও পরবর্তী সময়ে তিনি প্রচণ্ড ধর্মপরায়ণ হয়ে ওঠে। বাবা মায়ের প্রতি অপরিসীম ভক্তি তাঁকে অহিংস নীতির দিকে ধাবিত করে। মাত্র একটি ঘটনা তাঁর জীবনের মাের ঘুড়িয়ে দেয়। আর তা হলাে তাঁর বাবার মৃত্যু।
তিনি সারাজীবন সত্যকেই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করতেন। এ শুধু আপেক্ষিক সত্য নয়-চিরন্তন সত্য, শাশ্বত সত্য, পরম সত্য, তথা প্রমেশ্বর। পরমেশ্বরের অগণিত নাম। তার সংজ্ঞাও অগণিত। কারণ তার প্রকাশের ভঙ্গিও অনন্তরূপে । এই প্রেম প্রকাশ তাঁকে আশ্চর্য ও স্তম্ভিত করে- ক্ষণিকের জন্য মুগ্ধ করে। কিন্তু তিনি বলেন,
“আমি সত্যরূপে তাঁকে পুজা করি, আমি আজও তাকে প্রত্যক্ষ করি নি। কিন্তু তাঁকে অন্বেষণ করছি প্রতিনিয়ত। সেই অন্বেষণের জন্য যা আমার অত্যন্ত প্রিয় তাও আমি পরিত্যাগ করতে প্রস্তুত আছি। এই অন্বেষণের সাধনায় প্রয়ােজনে আমি প্রাণ দিতেও প্রস্তুত আছি।”
তিনি আরও বলেন- I have nothing new to teach the world. Truth and non-violence are old as the hills’.
সত্যাগ্রহ আন্দোলন, জালিয়ানওয়ালাবাগ আন্দোলন, লবণ আন্দোলন প্রভৃতি আন্দোলনে তার মূল হাতিয়ার ছিল অহিংস নীতি। সম্ভবত পৃথিবীর ইতিহাসে রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষ ছাড়া কোন বিপ্লব সংগঠিত হয়নি। কিন্তু গান্ধীজীর অহিংস নীতি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। এই নীতির দ্বারাই ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পথ তরান্বিত হয়েছিল। তিনি শুধু ভারতবর্ষেই নয় সুদূর আফ্রিকায় তার রাজনীতির প্রতিফলন পরিলক্ষিত হয়। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলমান কোন ধর্মের প্রতি তাঁর একক পক্ষপাতিত্ব ছিল না। আমরা তাকে পৃথিবীর ইতিহাসে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রবাদ পুরুষ বলতে পারি।